
সাজু ক্লাস থ্রি-তে পড়ে। লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো। তাই ক্লাস টিচার তাকে খুব পছন্দ করেন। আর সেকারণেই পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে সব বিষয়ে একটু বেশি জিজ্ঞেস করেন। এসব জিজ্ঞাসার মধ্যে অনেককিছু প্রয়োজনীয় আবার কিছু অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক। যেমন: কার বাবা কী করে? কারা কয়জন ভাইবোন? কে কী তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে এসেছে? ইত্যাদি, ইত্যাদি।
ক’দিন আগে ক্লাস টিচার কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কে কী তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে এসেছে। সাজু বলেছে ইলিশ মাছ।
তার কয়েকদিন আগে জিজ্ঞেস করেছিলেন সেদিনও সাজু বলেছিল, ইলিশ মাছ।
আজ ক্লাস টিচার প্রথমে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন। কেউ বলল, পুঁটি মাছ, কেউ বলল, গরুর মাংস, কেউ বলল সবজি। কিন্তু সাজু আজো বলল, ইলিশ মাছ।
ক্লাস টিচার থমকে গেলেন। এই তোকে না ক’দিন আগে জিজ্ঞেস করেছিলাম কী তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে এসেছিস? তুই সেদিনও বললি, ইলিশ মাছ। আজো বললি ইলিশ মাছ। তোর বাবা কী করে রে প্রতিদিন ইলিশ মাছ কিনে আনে?
স্যার আমার বাবা অটো রিকশা চালায়।
ইলিশ মাছের তো অনেক দাম। অটো রিকশা চালিয়ে তোর বাবা প্রতিদিন ইলিশ মাছ কিনে আনে?
সাজু না সূচক মাথা নাড়ল।
ক্লাস টিচার থমকে গেলেন, তো?
ক্লাসে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের চোখ তখন সাজুর ওপর সি’র।
বলতো ঘটনা কী?
সাজু বলতে শুরু করল, স্যার বাবা অনেকদিন আগে একদিন ক্ষেপ মেরে অনেক টাকা কামাই করেছিল। সেদিন বাজার থেকে একটা ইলিশ মাছ কিনে এনেছিল।
তারপর-
মা ঐ মাছটা তেলে ভেজে রেখে দিয়েছে।
তারপর-
এখন প্রতিদিন মা যখন তরকারি রান্না করে তখন ঐ ভাজা ইলিশ মাছটা তরকারিতে একটা ডুবিয়ে নেয়।
ক্লাস টিচার এতক্ষণ হাতে ডাস্টার নিয়ে সাজুর কথা শুনছিলেন। সাজুর কথা শুনে তিনি মনে অনেক কষ্ট পেলেন। তাঁর হাত থেকে ডাস্টার পড়ে গেল। একজন নিম্নবিত্ত মানুষের ইলিশের স্বাদ গ্রহণের কথা শুনে তাঁর দু’চোখ পানিতে এসে গেল।
সমাপ্ত
Leave a Reply