এক দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হলো। প্রকাশ্য দিনের বেলায় লুটেরারা লুট করলেও বিচার হতো না। জোর করে একজনের টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে গেলেও কোনো বিচার হতো না। যাকে কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধাবস্থ থেকে কম বলা যায় না।
এক ক্ষেতমজুর, হারাধন ভর দুপুরে মাঠে কাজ কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একটা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। হঠাৎ করে রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়ে গেলো। কারো মাথায় বস্তা, কারো হাতে ব্যাগ। সবাই শুধু দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে। হারাধন কিছু বুঝতে পারলো না। সে একজনকে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে দাদা? আপনি এতো বড় বস্তা নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন আর কোথা থেকেইবা এলেন? এতো দৌড়ে যাচ্ছেন কেনো?
লোকটির মাথায় বড় বস্তা সে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত, সে হারাধনের কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, তুই কথা বলিস্ না। দেখিস্ না আমার মাথায় কতো বড় বস্তা? ইসস্ ভারী।
হারাধন জিজ্ঞেস করলো, কী এগুলো?
টাকা?
কোথায় পেলেন দাদা? এতো টাকা!
লোকটির হারাধনের প্রতি দয়া হলো, সে হারাধনকে বললো, ও তুই তো দেখি কিছুই জানিস্ না। ব্যাংক লুট হচ্ছে, ব্যাংকের সব টাকা সবাই নিয়ে গেলো আর তুই এখানে বসে আঙ্গুল চুষিস্।
হারাধন আর দেরি করলো না, সে ব্যাংকের দিকে দৌড় দিলো। কিন্তু ততক্ষণে টাকা প্রায় শেষ। হারাধন গিয়ে দেখলো মেঝের ওপর ছড়ানো ছিটানো কিছু টাকা পড়ে আছে। সে টাকাগুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে একটা বড় পোটলাই হলো। সে টাকাগুলো কীভাবে নিবে বুদ্ধি পেলো না। কারণ তার পোরণে শুধু একটা লুঙ্গি ছাড়া আর কিছু নেই।
হারাধন ডানে-বাঁয়ে একবার তাকালো তারপর লুঙ্গি খুলে টাকা পোটলা করে মাথায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।
হারাধনের শরীরে কোনো কাপড় নেই। তার মাথার ওপর টাকার পোটলা। হারাধন কোনোদিকে তাকাচ্ছে না একরকম চোখ বন্ধ করে রাস্তা হেঁটে চলছে।
বাড়ি আর বেশি দূরে নয়। হারাধনের চিন্তা এই টাকা হলেই তাকে আর জীবনে কিছু করতে হবে না। সে হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু বিধি বাম।
হারাধন বাড়ির কাছাকাছি আসতে একটা গাছের নিচে কিছু বখাটে ছেলে আড্ডা দিচ্ছিলো। তারা হারাধনের এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলো, এই হারাধন তোর মাথার ওপর কী লুঙ্গি দিয়ে পোটলা বানিয়ে নিয়েছিস্ কেনো? এভাবে কথা বলতে বলতে একজন আঙ্গুল দিয়ে পোটলায় গুঁতো মারলো।
নগ্ন হারাধন লজ্জায় চোখ বন্ধ করলো।
আরেকজন হারাধনের পোটলা ফাঁক করে দেখে তো অবাক, এ তো দেখি টাকার পোটলা।
অন্য সবাই কপালে চোখা তুললো, এতো টাকা!
তাদের মধ্যে সবচেয়ে জুনিয়র ছেলেটি নেতা গোছের একজনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ওস্তাদ…
ওস্তাদ বলে ডাকতেই সেই নেতা গোছের ছেলেটি পা দিয়ে ইশারা করতেই একজন হারাধনের পৃষ্ঠ দেশে জোরে লাথি মেরে বললো, যা হারামজাদা, ভাগ্।
হারধন চোখ খুললো না। বখাটে ছেলেরা তার টাকার পোটলা নিয়ে চলে গেলো, আর সবকিছু হারিয়ে ন্যাংটা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো হারাধন।
হারাধন সব হারালো।
সমাপ্ত
লুটের রাজ্য
Posted in ছোটগল্প
Leave a Reply