তামান্নার সঙ্গে প্রতীকের সম্পর্কটা শুরুই হয়েছিল ঝগড়া দিয়ে। তারপর একসময় ঝগড়া থেকে রুপ নেয় মৈত্রীর, বন্ধুত্বের, ভালোবাসার। ভালোবাসাই বা কীভাবে বলা যায়? প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে একজনের পছন্দ-অপছন্দ এবং আশা-আকাংখার প্রতি আরেকজনের সম্মান থাকে, প্রতিশ্রুতি থাকে, স্বপ্ন থাকে কিন্তু তাদের হৃদয়ে এসবের স্থান কতটুকু আছে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।
ক’দিন দেখা না হলে দু’জনে নিজেকে নিঃসঙ্গ ভাবতে শুরু করে, একটা টান অনুভব করে। তখন আগের দিনের কথাগুলো ভুলে যায়। তখন আবার একসঙ্গে বের হয় কোথাও গিয়ে গল্প করে সময় কাটিয়ে দেয়। গল্পের শুরুটা হয় রোমান্স দিয়ে, খুব নিবীড়ভাবে দু’জনে বসে গল্প শুরু করে, যেন গল্পের শেষ নেই। তখন দুজনের চোখে থাকে বিয়ে করার স্বপ্ন, ঘর বাধার স্বপ্ন।
কীভাবে বাবা-মা’কে ম্যানেজ করে বিয়ে করবে? নাকি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে? কীভাবে ঘর সাজাবে? কীভাবে সংসার করবে? তাদের ছেলে হলে কী নাম রাখা হবে? মেয়ে হলে কী নাম রাখা হবে? আলোচনায় এতদুর পর্যন্ত স্থান পায়। তারপর কোন না কোন বিষয় নিয়ে শুরু হয় দ্বিমত। হঠাৎ করইে রোমাণ্টিক আলাপ উত্তেজনায় রুপ নেয়, মধুর মুহূর্তগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
তামান্না প্রতীককে বলে, সেজন্য তোমার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই না, দেখাও করতে চাই না।
বাঃ, বাঃ তোমাকে বুঝি আমি জোর করে নিয়ে এসেছি, আমারো তোমার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছা করে না।
ইচ্ছা করে না তো আসো কেন?
তুমি ডাকো বলেই তো আসি।
ঠিক আছে আমি আর ডাকবো না।
দেখা যাবে ক’দিন না ডেকে পারো।
দু’জনে দু’দিকে চলে যায়। আর কোনদিন দেখা না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রথম ক’দিন কেউ কাউকে খুঁজে না, তারপর একজনের মনের মধ্যে আরেকজনের ছবি ভেসে উঠে। ক’দিন আগের ঝগড়ার কথা দু’জনে ভুলে যায়। আবার দেখা করার জন্য, কথা বলার জন্য অজুহাত খুঁজতে থাকে।
তাদের সম্পর্কটা ঠিক একজন ধুমপায়ী আর সিগারেটের মতো। তামান্নার বাবা ধুমপায়ী, কয়েকমাস আগে তিনি একবার হার্ট এ্যাটাক্ট করেছিলেন। তখন ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিল ধুমপান ছেড়ে দেওয়ার জন্য। প্রথম ক’দিন ধুমপান করেননি কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই লুকিয়ে লুকিয়ে আবার সিগারেট শুরু করেন। বাইরে সিগারেট খেয়ে প্যাকেটটা পানের দোকানে রেখে আসতেন। একদিন লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার সময় তামান্না দেখে ফেলে, বাবা তুমি সিগারেট খাচ্ছ! তোমার না হার্টের অসুখ, ডাক্তার সারাজীবনের জন্য সিগারেট নিষেধ করেছে।
শুধু এইটা খাই রে মা, আর কোনদিন খাবো না।
তার বাবার কথা ঠিক থাকেনি, তিনি প্রতিদিন সিগারেট খান আর মনে মনে বলেন, এটাই শেষ আর জীবনে কোনদিন সিগারেট খাবো না। কিন’ যখন সিগারেটের নেশা হয় তখন সবকিছু ভুলে যান। আবার সিগারেট খান।
তামান্না বিছানায় শুয়ে এমনি নানান কথা ভাবতে ভাবতে আপন মনে হেসে উঠল। ক’দিন আগে প্রতীকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সে সময় একটু ঝগড়াও হয়েছে, তামান্না প্রতীকের মুখের ওপর তার সঙ্গে আর দেখা না করার সিদ্ধান্ত তাকে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাতে কী, এমন সিদ্ধান্তু তো অসংখ্যবার প্রতীকও বলেছে শেষ পর্যন্ত সেও তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি।
তাদের সর্ম্পকটা কী ভালোবাসার নাকি আসক্তির, প্রেমিক-প্রেমিকার নাকি ধুমপায়ী আর সিগারেটের মতো।
তামান্না বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
হ্যাঁ প্রতীকও তাদের জানালায় দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে সে যেন তামান্নাকেই খুঁজছে। তামান্না হাত দিয়ে নিচে নামার ইশারা করলো। তারপর সে নিজেও কাপড়-চোপড় পরে নিচে নামল।
তামান্নার সঙ্গে প্রতীকের ভালোবাসার সেতুবন্ধন তামান্নার দক্ষিণের বারান্দা আর প্রতীকের উত্তরের জানালা।
তামান্না তখন এইচ.এস.সি পাস করে অনার্স ভর্তি হয়েছে। বাবা-মা দু’জনে চাকরি করে, সারাদিন বাসায় থাকতে থাকতে তামান্নার মাঝে মাঝে একঘেঁয়েমি লাগে তখন সে বিকেলবেলা দক্ষিণের বারান্দায় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের বাড়ির অদূরে কয়েকটা সেমিপাকা বিল্ডিং তারপর একটা তিনতলা। এই তিনতলা বিল্ডিংটা না থাকলে সে আরো বেশিদূর পর্যন্ত আকাশ দেখতে পেতো। তিনতলা বিল্ডিংটার উত্তর দিকে একটা জানালা আছে, জানালাটা ঠিক তামান্নার বাসার বারান্দার মুখোমুখি।
একদিন বারান্দার গ্রীল ধরে তামান্না আকাশের দিকে তাকিয়েছিল। হঠাৎ তার চোখ পড়ল জানালায় একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সে প্রথমদিন বারান্দা থেকে সরে এলো। সেদিন থেকে তার মনের মধ্যে মাঝে মাঝে একটা কৌতুহল কাজ করতো। সে একরকম ইচ্ছা করেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতো, দেখি তো ছেলেটা জানালায় এসে দাঁড়িয়েছে নাকি?
হ্যাঁ প্রতিদিন বিকেলবেলা ছেলেটিও জানালায় এসে দাঁড়ায়, তামান্না জানালার দিকে চোখ করলেই ছেলেটিকে চোখে পড়ে। তামান্না কাউকে কিছু বলে না। সেও প্রতিদিন বিকেলবেলা বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। একদিন ছেলেটি কী যেন ইশারা করলো।
তামান্না তো রেগে ফেটে পড়ল, সে আপন মনে বিড় বিড় করে বলল, আনকালচার্ড, মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, নিজের ঘরে বুঝি মা-বোন নেই।
তামান্না একবার সিদ্ধান্ত নিলো তার বাবা-মাকে বলবে কিংবা তার কোন বন্ধুকে বলবে যেন উত্তম-মাধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তার রাগ থেমে গেল। দিনের পর দিন এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার নিজের অজানে- ছেলেটি একটা স্থান দখল করেছে। সাধারণত ছেলেরা বিকেলবেলা বাড়ির বাইরে ঘুরে বেড়ায়, খেলতে যায়, আড্ডা দিতে যায় কিন্তু এই ছেলেটি কি বিকেলবেলা কোথাও যায় না? কুণো ব্যাঙ নাকি?
একদিন তামান্না বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানালার দিকে তাকিয়েছিল। ছেলেটি ইশারা করলো। প্রথমে তামান্না বুঝতে পারেনি কয়েকবার ইশারা করার পর বুঝতে পারল, ছেলেটি তাকে নিচে নামতে বলছে।
তামান্নার মনের মধ্যে একটা নতুন অনুভূতি সৃষ্টি হলো, একটা নতুন আকর্ষণের টানে তার একটা হাত ইশারা করে ছেলেটিকে আসতে বলল।
তামান্না একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে, চুলে একবার চিরুনির আঁচড় দিয়ে নিচে নামলো।
ছেলেটি দেরি করেনি। তামান্না নামার কয়েকমিনিটের মধ্যেই সেও তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো।
তামান্না প্রথমেই এক চট নিলো, আপনি সবসময় মাথা উঁচু করে আমদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকেন কেন?
আপনি কীভাবে বুঝলেন?
আমি যতবার দেখি ততবারই আপনাকে আমাদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি।
আপনিই বা বার বার আমাদের জানালার দিকে তাকান কেন?
আমি মেয়ে মানুষ, বারান্দায় ঝাড়ু দিতে যাই, কাপড় শুকাতে দিতে যাই। বারান্দায় গিয়ে একবার এদিক-সেদিক তাকাবো না? কোন ছেলে মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে কি না?
আমি তো আপনাকে কোনদিন কাজ করতে দেখি না। কোনদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেও দেখি না। এদিক-সেদিক তাকাতে দেখি, আপনাকে কেউ দেখে নাকি আপনি কাউকে দেখেন?
কী বললেন আপনি?
হ্যাঁ আপনি তিনতলায় থাকেন, বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করেন আর আমি থাকি নিচতলায় আমি যতই তাকিয়ে থাকি না কেন আপনি না তাকালে তো আমাকে দেখতে পারবেন না।
খুব জটিল মানুষ তো আপনি? এজন্য আসলে আবাসিক এলাকায় মেস ভাড়া দেওয়া ঠিক না।
মেস কি আবাসিক না? পুরুষ আর মহিলা এক সঙ্গে থাকলেই ফ্যামিলি হয় আর শুধু পুরুষরা এক সঙ্গে থাকলে ফ্যামিলি হয় না। গ্যারেজ হয়, না?
বুঝছি কথায় আমি আপনার সঙ্গে পারবো না, বাড়িওয়ালা মেস ভাড়া দিয়েছে ভালো কথা তাই বলে আপনারা প্রতিবেশীর ভালো-মন্দ বুঝবেন না? আমি যতবারই তাকাই ততবারই দেখি আপনি হাঁ করে আমাদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছেন, আর তো কাউকে দেখি না। আপনার কোন কাজ নেই নাকি?
আছে, তবে কাজের মাঝে মাঝে রিক্রিয়েশনটাকেও আমি কাজ মনে করি। রিক্রিয়েশন না থাকলে কাজে একঘেঁয়েমি আসে।
তো কি কাজ করা হয়?
আমি এবার ইকোনোমিক্সে অনার্স ভর্তি হয়েছি, কারমাইকেলে।
তামান্না বিশেষ ভঙ্গীতে মাথা উঁচু করে জিজ্ঞেস, নাম কী?
প্রতীক। আপনার নাম?
আমার নাম জানাটা আপনার জন্য খুব জরুরী না।
আচ্ছা থাক আপনার নামটা খারাপ হলে বলতে হবে না। বলে প্রতীক তার মতো করেই বলল, তো কী করা হয়?
আমারটা আপনার না জানলেও চলবে।
বাঃ এটা কোন ধরনের কথা, আপনি আমাকে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন আর আমাকে একটা কথাও বলবেন না?
না আমি কোন প্রশ্ন করা পছন্দ করি না।
প্রতীক রেগে গেল, আপনি পছন্দ করেন আর না করেন আপনি হাজারটা প্রশ্ন করবেন আর একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিবেন না এটা হয় না।
তামান্না রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলল, দেখুন আর কখনো আমাদের বারান্দার দিকে তাকাবেন না।
আমিও সেকথাটাই বলার জন্য আপনাকে ডেকেছিলাম, আপনিও আমাদের জানালার দিকে আর কোন দিন তাকাবেন না।
সেদিনের পর থেকে তামান্না নিজেই প্রতীককে দেখার জন্য বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে কিন্তু প্রতীককে আর দেখতে পায়নি। প্রথমে তার ধারণা ছিল প্রতীক জানালায় দাঁড়িয়ে থাকলে সেখানে থাকতে তার সংকোচ হয়, সে অশ্বস্থি বোধ করে কিন্তু সেদিনের পর থেকে প্রতীককে না দেখলে বিকেলটা কেমন নিরানন্দ হয়ে যায়, মনে হয় দিনের কোন একটা কাজ বাকী আছে। তার প্রায়ই মনে হতে লাগল, প্রতীকের ওপর আমি অন্যায় করেছি, একবার যদি দেখা হতো তবে…..
না, না সরি বলবে না সে।
অনেকদিন পর একবার প্রতীককে জানালায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তামান্না হাতের ইশারায় ডাকলো কিন্তু প্রতীক প্রথমে কোন সাড়া দিলো না। তারপর আবার ডাকলো কিন্তু প্রতীক তার ওপর খুব রাগ করেছে সে এবার না সূচক হাত নাড়ল।
তামান্না দু’হাত জোড় করে করে নিচে নামার ইশারা করলো, এবার প্রতীক হ্যাঁ সূচক ইশারা করে তামান্নাকে তাদের বাসার দিকে ডাকলো।
তামান্না নেমে কিছুদূর যেতেই রাস্তায় প্রতীকের সঙ্গে দেখা হলো, সেদিন আপনি আমার ওপর খুব রাগ করেছেন, না? সরি আমি আপনার সঙ্গে ইয়ার্কি করছিলাম।
ও সেদিন তাহলে ইয়ার্কি করার জন্য ডেকেছিলেন আর আজ অপমান করার জন্য ডেকেছেন?
আমি কিন্তু সেদিনের ব্যবহারের জন্য সরি বলেছি।
এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলব?
বেশ তো চলুন না, কোথাও একটু বসি।
চলুন।
দুজনে রিক্সায় উঠে কফি হাউজে গেল।
বিকেলবেলা কফি হাউজে তখন আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। প্রতীক একবার কফি হাউজে চোখ বুলিয়ে নিলো, না কোথাও সিট খালি নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে, সীমিত আলোতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের নিরিবিলি কথা বলার জন্য রংপুর শহরে কফি হাউজের তুলনা নেই।
একজন বয় বলল, একটু ওয়েট করুন কেবিন খালি হবে।
কয়েকমিনিটের মধ্যে কেবিন খালি হলো। এক জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা বের হলো। তামান্না আর প্রতীক কেবিনে বসল। কেবিনে একটা লাল রংয়ের ড্রিম লাইট জ্বলছে। সেই লাল রং তামান্নার ফর্সা ধবধবে মুখের ওপর প্রতিফলিত হয়ে জবা ফুলের মতো লাল রং ধারণ করেছে। প্রতীক কয়েকমুহূর্ত তামান্নার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
তামান্না প্রাইজ লিস্টটা প্রতীকের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
কী খাবেন বলুন? প্রতীক জিজ্ঞেস করলো।
তামান্না অর্ডার দিলো।
প্রতীক বলল, বলুন আজ আবার কেন ডেকেছেন?
সেদিন আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আমি সবসময় একটা অপরাধ বোধে ভুগছিলাম। সবসময় শুধু আপনার কথা মনে পড়ছিল।
তো?
আর সেদিনের কথা তুলে আমাকে লজ্জা দিবেন না। এখন আপনার কথা বলুন?
আপনি যেন কোথায় লেখপড়া করেন? বলেই প্রতীক জিহবা কাটলো, ও আপনাকে তো আবার কিছু জিজ্ঞেস করা যাবে না।
সেদিনের কথা বাদ দিন, মনে করুন সেটা একটা দূর্ঘটনা। আমি বেগম রোকেয়াতে পড়ি পলিটিক্যাল সাইন্সে, ফার্স্ট ইয়ার।
খাবার চলে এলো।
প্রতীক বলল, নিন প্লিজ।
তামান্না আগে প্রতীকের প্লেটে স্যুপ তুলে দিলো তারপর নিজে নিলো।
দুজনে অনেকক্ষণ গল্প করলো। তামান্না একটু বেশি কথা বলে, কথা বলার স্পিডটা একটু বেশি। কোন কথা অনুধাবন করার আগেই অন্য কথা শুরু হয়ে যায়। সে কি পছন্দ করে, কি পছন্দ করে না। তার কথার মাঝে বেরিয়ে পড়ল প্রতীককে তার ভালো লেগেছে।
প্রতীক বলল, তামান্না আপনি যতই রাগ করুন আর নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করুন আপনি কিন’ নিজের অজানে- একটা সত্য স্বীকার করে ফেলেছেন?
কী?
আমাকে আপনার ভালো লেগেছে।
আপনাকে আমার ভালো লাগতে বয়েই গেছে। আপনি জানেন আমি বাবা-মা’র একমাত্র সন-ান। তারা কখনো আমাকে একজন স্টুডেণ্টের সঙ্গে বিয়ে দিবে না।
তার মানে আপনি রাজি আছেন আপনার বাবা-মা বিয়ে দিলে আপনি বিয়ে করবেন?
তামান্না লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেল।
সে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বলল, আপনি তো খুব সুযোগ সন্ধানী। ধীরে ধীরে আপনি—বলে কি যেন বিড় বিড় করে বলতে বলতে তামান্না বেরিয়ে গেল।
তারপর দু’দিন কথা বলা বন্ধ ছিল। তৃতীয় দিন আবার সেই জানালা আর বারান্দার কথা বলা। তারপর আবার একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, আবার চোখে চোখ রেখে স্বপ্ন দেখা যেন ক্ষণিকের মধুর সময় কাটানো।
একদিন প্রতীক তামান্নাকে বলল, তামান্না তোমাকে একটা কথা বলব কিছু মনে করবে না তো?
মনে করার মতো কথা হলে বলো না।
কিন’ কথাটা নিয়ে আলাপ করা দরকার।
কেন?
যেহেতু আমরা একটা লং টার্ম রিলেশনের কথা চিন-া করছি।
তাই নাকি?
তোমার কোন সন্দেহ আছে নাকি?
তামান্না প্রতীকের চোখে চোখ রেখে হেসে উঠল।
তামান্না আমি কোন হাসির কথা বলছি না, একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছি।
তামান্না নড়েচড়ে বলল, বলো।
তামান্না আমরা প্রতিদিন ঝগড়া করে যার যার মতো দু’দিকে চলে যাই, প্রতিদিন সিদ্ধান্ত নিই আর কেউ কারো সঙ্গে কথা বলব না কিন’ দু’য়েকদিন যেতে না যেতেই কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারি না।
তামান্না খুব সহজভাবে বলল, আমি পারবো।
তামান্না তুমি কি সিরিয়াসলি বলছ?
হ্যাঁ।
প্রতীক বুকে একটা প্রচণ্ড ধাক্কা পেল। সে একবার তামান্নার মুখের দিকে তাকালো, তার কথা বলার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা নেই। প্রতীক তার চোখে চোখ রাখলো তার চোখের ভাষা বুঝল না। প্রতীকের দু’চোখ ছল্ছল করে উঠল।
তামান্না পারবে, সবকিছু পারবে কিন’ মনের মধ্যে সবসময় তোমার একটা না পাওয়ার হাহাকার থাকবে।
থাকবে না।
তামান্না আমি আজ চলে গেলে কিন’ আর কোনদিন ফিরে আসবো না।
আসবে না।
প্রতীক উঠে দাঁড়ালো।
তামান্না জিজ্ঞেস করলো, উঠলে যে?
তুমি খুব রহস্যময়ী, তুমি একটা হৃদয়হীনা, তোমাকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছি।
প্রতীক শোন, প্রতীক আমি তোমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছিলাম, আর তুমি…
সমাপ্ত।
Leave a Reply