ক’দিন আগে অতিবাহিত হলো মহাআনন্দের ঈদ। এদিনে সারাদেশে মুসলমানদের ঘরে ঘরে আনন্দের সীমা ছিল না। ঢাকা শহরে এ আনন্দের পূর্বাভাষ পরিলক্ষিত হয়েছিল রমযানের প্রায় শুরু থেকেই। ঈদের কয়েকদিন পূর্ব থেকেই মার্কেটগুলো সজ্জিত হয়েছিল অত্যাধুনিক সাজে, কেনাকাটায় ভিড় ছিল অস্বাভাবিক, দ্রব্যমূল্যের দামও ছিল সর্বসাধারণের ধর-ছোঁয়ার বাইরে। কোন এক মার্কেক থেকে একটি লেহেঙ্গা আশি হাজার টাকা এবং একটি শাড়ি এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় বিক্রির কথা রুপকথার মতো কানে এসেছে, কিনেছেন এক শিল্পপতির গৃহিণী, বাহাবাও কুড়িয়েছেন বেশ।
শুধু কি তাই? আমাদের দেশের মার্কেটগুলোতে পছন্দমতো কাপড়-চোপড় না পাওয়ার অজুহাতে অনেকে ঈদের শপিং করেছেন কলকাতা, বোম্বে, সিঙ্গাপুর এর মতো নিজেদের সুবিধামতো স্থান থেকে। এ তো গেল ঈদের কয়েকদিন আগের কথা, ঈদের ঠিক আগের দিন রাজধানীতে ঈদকে স্বাগত জানানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পটকা ও আতসবাজী দিয়ে। কতদিন যেন মানুষের মধ্যে এত আনন্দ দেখিনি, আমার কাছে যেন মনে হয়েছিল ঢাকা শহর লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারীতে শুধু নিস্তব্ধ থাকতে জানে না, হাসতেও জানে।
বিভিন্ন ঈদগাহে নামাজ হয়েছে, নামাজ শেষে মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন বছরে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে যাবার শপথ নিয়ে নিজ নিজ পরিজনদের সাথে বসে সুস্বাদু আহার করেছে। তারপর শুরু হয়েছে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কুশলাদি বিনিময় ও মিষ্টিমুখ পর্ব।
অনেকদিন যাবত ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ হয়নি, তাই বিকেলবেলা বের হলাম ঘুরবো বলে। মালিবাগ, কাকরাইল হয়ে রমনা পার্ক, শিশু পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখার পর শাহবাগে মিরপুরের বাসে উঠে গেলাম ফার্মগেইট। তারপর তেজগাঁও রেলক্রসিং এ এসে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরলাম। কিন’….আমি ভুল দেখিনি তো! একমাস ধরে ঈদের যে সাজসজ্জা, আতসবাজী, ঈদগাহে কোলাকুলি করা, রমনাপার্কে আনন্দমুখর মানুষ, শিশু পার্কের কত বিচিত্র পোশাকের হাস্যজ্জ্বল শিশু-কিশোর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কপোত-কপোতীদের ঢলাঢলি এসব মিথ্যা নয় তো!
তবে যে দেখলাম রমনাপার্কের সেই ছেলেটি, যাকে মাসখানেক আগেও দেখেছি রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে ভিক্ষা করতে, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, খিলগাঁও বসি-তে উলংগ ছেলেগুলো দৌড়াদৌড়ি করছে, একমাস আগে এমনকি ঈদের ঠিক আগের দিনেও যাদের ডাস্টবিন থেকে ময়লা-পঁচা, দুর্গন্ধযুক্ত খাবার কুড়িয়ে খেতে দেখেছি তারা তো ঠিক আগের মতোই ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খেয়েছে, রাস্তার পার্শ্বে পড়ে থাকা পলিথিন কুড়িয়ে যে বৃদ্ধাটি জীবিকা নির্বাহ করতো তাকে তো ঈদের দিনেও দেখলাম। তবে কি ঈদ শুধু ক’জন উচ্চাভিলাষীর জন্য?
আমি হলফ করে বলতে পারি কোন ধর্মে কলকাতা, বোম্বে, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক থেকে শপিং করে পর্ব পালনের কথা বলা নেই বরং ইসলাম ধর্মে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। যারা অনেক দামী কাপড়-চোপড় পরে নামাজ আদায় করেছেন, শপিং করার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তারাও ইসলাম ধর্মের অনুসারী।
আর যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে ঈদের নামাজ পড়েছেন, পরষ্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন, তারা কি সকলের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন? তারা কি ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন? তবে দেশজুড়ে এত আহাজারী কেন? কেন ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার ধ্বনি?
ইসলাম সাম্যের ধর্ম, সংযমের ধর্ম, শানি-র ধর্ম এ বিশ্বাসের ওপর যখন রোজা রেখেছেন তখন হাজার হাজার টাকা অপচয় করে সুখ কেনার, আনন্দ কেনার চেষ্টা কেন? তারচেয়ে নিজের অপচয়টুকু রোধ করে সবার মুখে হাসি ফোটানোই শ্রেয় নয় কি? বরং তাতে ঈদ হয়ে উঠতো আরো আনন্দময়, আরো কল্যাণকর,আরো সার্থক।
উচ্চাভিলাষীদের অপচয় প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো দৃঢ হোক, আগামী ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দময়।
সমাপ্ত।
এলো খুশির ঈদ
Posted in ছোটগল্প
Leave a Reply