চ্যাটিং চিটিং ডট কম

হাতের মোবাইলটাই মিথিলার নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তির একমাত্র অবলম্বন, মোবাইলটাই তার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মোবাইলের সে অনেকের সঙ্গে কথা বলে যাদের সে চেনে না, কোনদিন দেখেনি, হয়ত কোনদিন দেখাও হবে না। আগে কখনো খারা লাগলে মাকে মোবাইল করতো, ভাইবোনকে মোবাইল করতো কিন্তু মোবাইল করে সময় কাটানোর জন্য মা-বোনদের সঙ্গে কথা বলাই যথেষ্ট না। মিথিলা খেয়াল করেছে যাদের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক আছে যেমন মা বা ভাইবোন তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একসময় তার কথা শেষ হয়ে যায়। বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বললেও বেশিক্ষণ কথা বলার মতো কথা থাকে না একসময় আর কোন কথা খুঁজে পায় না।
মা’র সঙ্গে কথা বললে জিজ্ঞেস করে, মা কেমন আছ? কী খেয়েছ? প্রেসারটা নরমাল কি না? গ্যাস্টিকের ব্যাথাটা আবার উঠেছিল কি না? তারপর এক সময় শেষ হয়ে যায়।
বোনদের সঙ্গে কথা বললে জিজ্ঞেস করে, কী রে কেমন আছিস? দুলাভাই কেমন আছে? এই সব।
কখনো কখনো বোনরা বলে, এই মিথিলা রাখি রে এখন রান্না করতে হবে। তখন মিথিলার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। তার মনে হয় পৃথিবীতে সবাই ব্যস্ত, শুধু তার কোন কাজ নেই, যেন সব সময় বসে থাকা।
কখনো কখনো খুব খারাপ লাগে তখন দুর্জয়কে মোবাইল করে। দুর্জয় সাভারে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। অনেক টাকা বেতন পায় কিন্তু কাজ করতে হয় প্রচুর, সেই সকাল আটটার সময় সে বেরিয়ে যায় ফিরে আসে অনেক রাতে। যখন ফিরে আসে তখন সে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে যেন অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে পড়ে। দুর্জয়কে মোবাইল করলে দু’য়েক মিনিট কথা বলে ব্যস্ততার কথা বলে মোবাইল রেখে দেয়।
মা-বোন, বান্ধবী, স্বামীসবাই যখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তখন নিজের সময় কাটানোর জন্য মোবাইলকেই মিথিলার সবচেয়ে বেশি কাছের বলে মনে হয়। কিছুদিন আগে মিথিলার কয়েকজন ফোন ফ্রেণ্ড জুটেছিল, তাদের মধ্যে একজনকে তার একটু অন্যরকম মনে হয়েছিল। কথাবার্তায় তাকে মিথিলার নিরাপদ বলে মনে হয়নি। মোবাইল করেই আজেবাজে কথা বলতো, এডাল্ট ম্যাসেজ পাঠাতো। অগত্যা মিথিলা আর সেই সিম কার্ড ব্যবহার করে না, তার মোবাইলের সিম কার্ড রাখার একটা ছোট্ট প্যাকেট আছে সেখান থেকে একটা সিম কার্ড বের করে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এই সিম কার্ডটার ব্যবহার শুরু করার অনেকদিন হলো, এখনো সে সহজে অপরিচিত কোননাম্বারথেকে আসা কল রিসিভ করে আগে হ্যালো বলে না, আগে কণ্ঠস্বরপরিচিত কি না নিশ্চিত হয় তারপর বলে, হ্যালো।
সকালবেলা দুর্জয় বেরিয়ে যাবার পর মিথিলা পেপার পড়ছে, পত্রিকার বিজ্ঞাপনে চ্যাটিং করার বিষয়টি দেখে সে হেল্প লাইনে মোবাইল করে চ্যাটিং করার নিয়ম এবং চ্যাটিং করার ফলে তার মোবাইল নাম্বারফাঁস হয়ে যাবে কী না তা নিশ্চিত হয়ে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে লিখলো, Friend তারপর পাঠিয়ে দিলো মোবাইল কোম্পানির নির্ধারিতনাম্বারে।
তারপর যে ম্যাসেজটি এলো তার বাংলা অর্থ আপনি কি চ্যাটিং করতে চান? লিখে পাঠান আপনার কাংখিত বন্ধুর বয়স, সেক্স এবং স্থান।
মিথিলা লিখে পাঠালো তার কাংখিত বন্ধুর বয়স ২০, পুরুষ, ঢাকা।
তিনটি নাম এলো, এ সুজন ২০, এম
বি নিলয় ২০, এম
সি হিমেল ২০, এম
মিথিলা এ লিখে পাঠিয়ে দিলো।
কোন উত্তর এলো না।
মিথিলা একে একে বি এবং সি লিখে পাঠিয়ে দিলো। চ্যাটিং করার আমন্ত্রণ এলো নিলয়ের কাছ থেকে।
মিথিলা জানতে চাইলো, আপনি কী করেন?
উত্তর এলো, লেখাপড়া।
কোথায়?
একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে।
কী বিষয়?
বি.বি.এ লেখার পর একটা প্রশ্ন এলো, আপনি কী করেন?
মিথিলা একটু চালাকি করলো। সে উত্তর পাঠালো, লেখাপড়া।
ভেরি গুড।
মিথিলা জানতে চাইলো, আপনার শখ কী?
উত্তর এলো, ভ্রমণ করা, আড্ডা দেয়া, বন্ধুত্ব করা। সেই সঙ্গে একটা প্রশ্ন এসেছে, আপনার শখ কী?
মিথিলা এক মুহূর্ত ভেবে নিলো, হ্যাঁ তার শখের সঙ্গে মিল আছে।
মিথিলা উত্তর দিলো, সেম টু ইউ।
প্রশ্ন এলো, আপনি কি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন?
ইয়েস।
একটা ম্যাসেজ এলো, সঙ্গে একটা মোবাইল নাম্বার। আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। প্লিজ এই নাম্বারে একটা মিস্ কল দিন।
মিথিলা কিছুটা চিন্তায় পড়ল, নাম্বারটা জানিয়ে দেয়া কি ঠিক হবে? আবার যদি দিন রাত কল আসতে শুরু করে, দুর্জয় জানতে পারবে, সে খুব রাগ করবে। না মিথিলা মোবাইল নাম্বার দিলো না, সে আর কোন যোগাযোগ ছাড়াই চ্যাট করা বন্ধ করল। তার মোবাইলে ম্যাসেজ আসতে থাকলো। সে মোবাইলের ম্যাসেজ টোন অফ করে মোবাইল রেখে দিলো।

পরদিন সকালবেলা মিথিলা আবার চ্যাট করতে শুরু করলো। না আজ কেন জানি নিলয়ের নাম এলো না। সে গতকালের ম্যাসেজ থেকে নিলয়ের সঙ্গে চ্যাট করতে শুরু করলো, হ্যালো নিলয় কেমন আছ?
উত্তর এলো, ভালো।
মাইণ্ড করেছ?
আপনি তো মাইণ্ড করার মতোই কাজ করেছেন।
সোরি আমার মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না।
আজ কি তোমার মোবাইলে ব্যালেন্স আছে? যদি থাকে তবে আমার মোবাইলে একটা মিস্ কল দাও।
মিথিলা একই কোম্পানির একটা পুরাতন সিম কার্ড বের করে নিলয়ের মোবাইলে একটা মিস্ কল দিলো।
নিলয় মিথিলার মোবাইলে রিং দিলো কিন্তু মিথিলা রিসিভ করলো না। তার মনের মধ্যে অনেক চিন্তা ভীড় করছে, নিলয় হয়ত তার কণ্ঠস্বর শুনে বয়স লুকানোর বিষয়টা বুঝতে পারবে। হয়ত তার চেয়ে বেশি বয়সের কোন মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নাও চাইতে পারে। বিয়ে কিংবা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে মেয়ের চেয়ে ছেলের বয়স বেশিকেই স্বাভাবিকবলে ধরে নেওয়া হয়। তাছাড়া মিথিলাকে অনেক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারে তখন এক সঙ্গে অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলতে হবে।
মিথিলা তার সিম কার্ডের প্যাকেট থেকে আরেকটা সিম কার্ড বের করে নিলয়ের মোবাইলে একটা ম্যাসেজ পাঠালো, নিলয় আমি তোমার চ্যাটিং ফ্রেণ্ড, সে রকম পরিবেশ হলে খুব ভালো বন্ধুত্ব হতে পারে।
নিলয় উত্তর পাঠালো, ওকে থ্যাংকস্ এ লট।
তারপর থেকে প্রতিদিন সকালবেলা দুর্জয় অফিস যাওয়ার পর মিথিলা আর মোবাইল কোম্পানির নাম্বারেম্যাসেজ পাঠাতো না। সরাসরি নিলয়ের মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠাতো, দুপুরে খাওয়ার পর আবার শুরু হতো ম্যাসেজ পাঠানো। দিনে দিনে মিথিলার মনে নিলয়ের প্রতি একটা আকর্ষণ কাজ করতে শুরু করেছে, বেশির ভাগ সময় সে-ই আগে নিলয়কে ম্যাসেজ পাঠায়। তাছাড়া মিথিলা নিলয়ের সঙ্গে যে সিম কার্ডটা দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছে সেই সিম কার্ডটা শুধু নিলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় চালু থাকে।
যেন এক অদ্ভুত সম্পর্ক। কেউ কাউকে কোনদিন দেখেনি, কোনদিন দেখা হবে কি না কেউ জানে না। শুধু দেখা না হওয়া নয়, কেউ কারো কণ্ঠস্বরপর্যন্ত শোনেনি অথচ একজন আরেকজনকে ভালোবেসে ফেলেছে, রীতিমতো প্রেম করছে।
আজ হঠাৎ করে মিথিলার মাথায় একটা নতুন চিন্তা এলো, নিলয় নামে আমি সত্যি কোন ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের সঙ্গে ফ্রেণ্ডশীপ করছি নাকি কোন মেয়েই ছেলে সেজে জোক করছে?
সে নিলয়ের মোবাইলে রিং দিলো।
নিলয় রিসিভ করেছে, হ্যালো।
না, নিলয় কাল্পনিক না, বাস্তব।
মিথিলা চুপ করে রইল।
নিলয় বলল, হ্যালো মিথিলা, কথা বলো।
নিলয়ের কণ্ঠস্বরমোটা মনে হলো, মিথিলার মনে হলো তার মতো নিলয়ও তার বয়স কমিয়ে বলেছে। মিথিলা কী করবে? সে কিছু বলতে গিয়ে যেন তার জিহব্বা আড়ষ্ঠ হলো। সে মোবাইল রেখে দিলো।
নিলয় রিং দিলো।
মিথিলা রিসিভ করবে কি না ভেবে পাচ্ছে না, নিলয় কয়েকবার রিং দিলো। তারপর মিথিলা রিসিভ করলো, হ্যালো।
হ্যালো মিথিলা উই আর ফ্রেণ্ড, ফ্রেণ্ডের সঙ্গে কথা বলতে কোন জড়তা থাকা ঠিক না। অনেকদিন তো হলো এখন কথা বলো, আমাদের কথা বলা উচিত, আমাদের একবার দেখা হওয়া উচিত।
মিথিলা কোন কথা বলল না।
হ্যালো মিথিলা শুনছ?
বলো।

সেদিনের পর থেকে শুরু হলো দুজনে মোবাইলে কথা বলা। নিলয় মিথিলাকে সময় দেয়, কোন কোন বিষয় দুজনে শেয়ার করে। যেন দুজনে দুজনের ভালো বন্ধু।
একদিন নিলয়ই প্রথম প্রস্তাব দিলো, মিথিলা আমরা প্রথমে মোবাইলে চ্যাটিং করেছি, তারপর এস.এম.এস, অনেকদিন থেকে কথা বলছি কিন্তু কেউ কাউকে দেখিনি। বিষয়টা কেমন অদ্ভুত না?
তাতে কী, আমার কাছে মনের সম্পর্কটাই বড়। বন্ধুত্ব হলেই দেখা করতে হবে, এক সঙ্গে পার্কে ঘুরে বেড়াতে হবে, ডেটিং করতে হবে-
না তা নয় ডেটিং পর্যন্ত যাওয়া যেমন অতিরঞ্জিত, কোন কণ্ঠের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাটাও তেমনি হাস্যকর।
তারমানে দেখা হওয়া দরকার।
আমি তাই মনে করি।
আচ্ছা বলো তাহলে কবে, কোথায় দেখা হবে?
কোথায় দেখা করবে? কোন পার্কে নাকি কোন রেস্টুরেণ্টে?
না আমি পার্কে যাবো না।
তাহলে বসুন্ধরা সিটিতে।
হ্যাঁ কাল ঠিক বিকেল পাঁচটায়, তুমি গেটে থেকো।
তুমি কীভাবে আমাকে চিনবে?
মোবাইল তো আছেই, রিং দিবো।
ওকে, বাই।
গতকাল নিলয়ের সঙ্গে বসুন্ধরা সিটিতে তার দেখা হওয়ার প্রোগ্রাম হওয়ার পর থেকে মিথিলার মাথায় অনেকগুলো চিন্তা ভীড় করছে। মোবাইলের ওপাশে যে মানুষটার সঙ্গে সে এতদিন কথা বলেছে আজ সত্যি সত্যি তার সঙ্গে দেখা হবে।
নিলয় কি সব কথা সত্যি বলেছে? সে নিজেকে ছাত্র পরিচয় দিয়েছে কিন্তু তার কণ্ঠস্বরবেশ ভারি বলে মনে হয়েছে, সে তার বয়সের কথা যা বলেছে কণ্ঠস্বরযেন তার চেয়ে বেশ কয়েক বছর এগিয়ে গেছে। নিলয় যদি সত্যি সত্যি ছাত্র না হয়ে কোন বখাটে হয়, যদি কোন সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজ হয়। বিচিত্র কী আজকাল তো এমনি হাজার রকমের দুর্ঘটনাও ঘটছে।
মিথিলা তার আরেকটা পুরাতন সিম কার্ড বের করে মোবাইলে সেট করলো তারপর বসুন্ধরা সিটিতে চলে গেল। সে বসুন্ধরার গেট দিয়ে ঢুকলো আধ ঘল্টা আগে। তারপর লিফ্ট দিয়ে কয়েকতলা উপরে চলে গেল। সেখান থেকে পায়চারি করতে করতে গেটের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখলো। শত শত বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়ে, সবাই ভিতরে ঢুকে যার যার মতো চলে যাচ্ছে। একটা লোক অনেকক্ষণ আগে থেকে লবিতে পায়চারি করছে আর বার বার করে মোবাইলের বাটন টিপছে। ঐ লোকটাই কি নিলয়? বয়স পঁয়ত্রিশ কিংবা তারচেয়ে বেশি। মিথিলা নিচে নামল, কাছ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে একবার খেয়াল করল, লোকটার চোখের গোড়া কালো, চোয়াল দু’টো কোটরে বসে গেছে, চেহারা দেখে তাকে গাঁজা খোর বলে মনে হলো। মিথিলার বুক কেঁপে উঠল সে কোনভাবে পাশ কাটতে গিয়ে তার কানের কাছে কাশির শব্দ এলো, হ্যাঁ নিলয়ই তো মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে এমনিভাবে কাশতো। মিথিলা একটু আড়ালে গিয়ে নিলয়ের মোবাইলে রিং দিলো।
সেই বেরসিক মহিলার বিনীত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন।
সমাপ্ত

Facebook Twitter Email

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। কবিতার পাশাপাশি সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে শুরু হলো ছোটগল্প, উপন্যাস লেখা। একে একে প্রকাশিত হতে থাকলো কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস। প্রকাশিত হলো অমর একুশে বইমেলা-২০২০ পর্যন্ত ০১টি কাব্যগ্রন্থ, ১৪ টি উপন্যাস, ০৪ টি কিশোর উপন্যাস, ০১ টি গল্পগ্রন্থ এবং ০১ টি ধারাবাহিক উপন্যাসের ০৩ খণ্ড। গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পাশাপাশি লেখা ছড়িয়ে পড়লো অনলাইনেও। লেখার শ্লোগানের মতো প্রতিটি উপন্যাসই যেন সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি।

Posted in ছোটগল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*