পুলিশেরই বা দোষ কী? প্রতিদিন সকালবেলা বাজার করার জন্য তার শ’তিনেক টাকার প্রয়োজন। এই উর্দ্ধমূল্যের বাজারে তিন’শ টাকারই বা কী দাম আছে। ছোট চাকুরী তাই চাহিদাও কম। মাত্র তিনশ টাকা। কিন্তু এই তিন’শ টাকা না পেলে তার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। ট্র্যাফিক আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে চারদিক তাকায়, মক্কেল খুঁজতে থাকে। তিনশ টাকার মক্কেল।
সেদিন ছিল হরতাল। বেশ কড়াকড়ি হরতাল। রাস্তায় যানবাহন তো দূরের কথা রিকশা-ভ্যান পর্যন্ত চলছিল না। ক্রমেই দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস সকালবেলার তিনশ টাকার বাজার।
তার চোখে পড়ল দূর থেকে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে একটু বোকা, বোকা প্রকৃতির একটা লোক আসছে। সে বার বার করে সেই চটের ব্যাগের দিকে তাকাল। লোভে তার চোখ দু’টো চিক চিক করছে। সে ট্র্যাফিক আইল্যান্ড থেকে নেমে সেই বোকা, বোকা লোকটির দিকে একবার আপাদ মস্তক তাকাল। তারপর জিজ্ঞেস করল, নাম কী?
মোখলেস।
ব্যাগের ভেতর কী?
বেল।
দেখি বলে ট্র্যাফিক পুলিশ মোখলেসের ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে বলল, মিথ্যা কথা বলছিস, না? ব্যাগের ভেতর নিয়েছিস বোমা আর বলছিস বেল, তোর এতবড় সাহস?
মোখলেস জোর গলায় বলল, না এগুলো বেল, আমি এখনই বাজার থেকে কিনে আনলাম।
ট্র্যাফিক পুলিশ মোখলেসকে আইল্যান্ডের কাছে এনে কানে কানে চাপাস্বরে বলল, তিনশ টাকা দে, নইলে চালান দিয়ে দিব।
মোখলেস বলল, আমাকে চালান দিবেন কেন? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।
বেটা নিয়েছিস বোমা আর বলছিস বেল, আবার বলছিস কোনো অপরাধ করিসনি। থানায় গেলেই টের পাবি অপরাধ করেছিস কী না?
মোখলেস সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। সে ট্র্যাফিক পুলিশের কথায় মোটেই ভয় পেল না। তার ধারণা সেতো নিয়েছে বেল তাকে থানায় নিয়ে গেলেই কী আর কোর্টে নিয়ে গেলেই কী। ছাড়া তো সে পাবেই। সে তার দৃঢ় মনোবলের জন্য জোর গলায় বলল, আমি আপনাকে টাকা দিব কেন? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।
টাকা না পেয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে জোরে ধমকের সুরে বলল, চল, আমার সঙ্গে থানায় চল।
মোখলেস রেগে বলল, চলুন, আমিও যাবো আপনার স্যারের কাছে কমপ্লেইন করব।
মোড়ের এক কোণে একটা পুলিশ ভ্যান দাঁড়িয়েছিল। তারা হরতাল ডিউটি করছিল। সেই পুলিশ ভ্যানের কাছে আরো একজন ট্র্যাফিক পুলিশ দাঁড়িয়েছিল। দু’জনের তর্ক-বিতর্ক দেখে সে এগিয়ে এলো, কী হয়েছে হারুন ভাই?
হারুন বলল, দেখ তো হরতালের দিন এই বেটা ব্যাগের ভেতর করে বোমা নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে এগুলো নাকি বেল?
মোখলেস বলল, না এগুলো বেল।
হারুন বলল, এন্তাজুল তুমি একটু ডিউটি কর, আমি এই বেটাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি। বলে হারুন মোখলেসকে নিয়ে একটা রিকশায় উঠল।
মোখলেসও মনের জোরে তেমন বাড়াবাড়ি করল না।
হারুন থানায় ঢুকে ওসি সাহেবের কানে কানে কী যেন বলল। ওসি সাহেব চটকে উঠল, স্যান্ট্রি।
একজন পুলিশ কনস্টেবল এসে স্যালুট দিল, স্যার।
ওর ব্যাগটা খোলো তো।
স্যান্ট্রি ব্যাগ খুলে দেখাল।
ওসি সাহেব ভ্রু কুঁচকে বলল, সর্বনাশ, এতো দেখছি বোমা। কাকে মারার প্লান ছিল?
এবার মোখলেস কিছুটা ঘাবড়ে গেল। সে কাঁদ কাঁদ গলায় বলল, স্যার আমার কোনো দোষ নেই। আমি বাজার থেকে বেল কিনে নিয়ে যাচ্ছিলাম। এগুলো বোমা না, আমি কাউকে বোমা মারার প্লান করিনি।
ওসি সাহেব বলল, স্যান্ট্রি একে লোকাপে ঢুকাও।
স্যান্ট্রি মোখলেসের শার্টের কলার ধরে জোর করে টেনে হিঁচড়ে যেতে শুরু করল। মোখলেস কাঁদতে কাঁদতে বলল, স্যার এগুলো বোমা না, বেল।
ওসি সাহেব বলল, কাঁদছিস কেন? এইতো ক’দিনের ব্যাপার শুধু পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠাবো, ঢাকা থেকে পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই বোঝা যাবে এগুলো বেল না বোমা।
মোখলেস জোরে বলল, স্যার আমি সত্যি কথা বলছি, এগুলো বোমা না, আমি বাজার থেকে বেল কিনে আনছিলাম আর উনি আমাকে ধরে নিয়ে এলেন আর বললেন এগুলো নাকি বোমা।
সেটাই তো পরীক্ষা করতে পাঠাচ্ছি এগুলো বেল নাকি বোমা।
সমাপ্ত
Leave a Reply