কবি

আমি কবি,

আমি কবিতা লিখতে পারি কী না জানি না,

গদ্য কবিতার ভাষা আমার কাছে দুর্বেধ্য,

ছন্দহীন জীবনে আমার,

ছন্দময় কবিতা লেখা যে বড়ই দুঃসাধ্য।

আমার কবিদের মতো বেশ নেই,

মাথায় জট বাঁধা লম্বা চুল নেই,

পরনে নেই পাঞ্জাবি-পায়জামা,

কাঁধেতে ঝুলানো নেই কবি ব্যাগ,

সেই ব্যাগে নেই কবিতার পাণ্ডুলিপি,

কবি, তবুও আমি কবি।

 

আমি যাযাবর

আমি পথে পথে ঘুরি,

আমি সোনার বাংলার,

লাল-সবুজের ছবি আঁকি,

আমি সবুজ অরণ্যের গভীরে

আগ্নেয়গিরির ছবি আঁকি,

আমি পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা কান্নার ছবি আঁকি।

 

আমি প্রেমে প্রত্যাখ্যাত তরুণের কথা বলি,

আমি প্রেমের নামে প্রতারিত, হৃদয়ভাঙা তরুণীর কথা বলি,

আমি অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের কথা বলি,

এইসব অসঙ্গতি দেখতে দেখতে আমার ল্যাপটপের কিবোর্ড

বিদ্রোহ করে বসে,

দুর্বার গতিতে খটখট শব্দে প্রতিবাদ করে,

লেখা হয়ে যায় কিছু এলোমেলো ছন্দময়-ছন্দহীন লেখা,

যে লেখা মানুষের অব্যক্ত বেদনারই বহিঃপ্রকাশ,

কবিতা হয় কী না জানি না কিন্তু তবুও আমি কবি।

 

নবাবের সাথে বেইমানি করে,

বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাকে মীরজাফর দিল বৃটিশ বেনিয়ার হাতে তুলে,

শুরু হলো বৃটিশের শাসন-শোষণ,

পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়ালো ভারতবর্ষ,

জানা অজানা কত প্রাণ হলো বলিদান,

কত বীর, কত শহীদ হাসি মুখে দিয়ে গেল প্রাণ।

 

বৃটিশ গেল, এলো পাকিস্তান,

পরাধীনতার আরেক শৃঙ্খলে বন্দী বাঙালি জাতি,

শিকল তো নয় শুধু হাতেপায়ে,

মায়ের ভাষা কেড়ে নিয়ে তারা মুখেতেও দিল তালা,

বীরের জাতি আবার উঠল গর্জে,

রাজপথ প্লাবিত হলো শহিদের রক্তে,

পিছু হটল পাকিস্তান।

 

উনিশ’শ একাত্তর-

শোষণ ও বঞ্চনা

বৈষম্য ও দুঃশাসনের প্রতিবাদে রাজপথে নামলো জনতা,

অজস্র কণ্ঠে ধ্বনিত হলো,

’’বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো,

বাংলাদেশ স্বাধীন করো।”

২৫শে মার্চ কাল রাতে মুক্তি পাগল মানুষের ওপর,

ঝাঁপিয়ে পড়ল হায়েনার দল,

হিন্দু-মুসলমানের রক্ত,

বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের রক্ত,

মুচি-সুইপারের রক্ত একাকার হয়ে

রক্তের বন্যা বয়ে গেল ঢাকার রাজপথে।

মুক্তিপাগল মানুষ হালের পেন্ডি নিয়ে,

রুখে দিল কামানের গোলা,

লক্ষ শহিদের রক্ত,

অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে

কেনা হলো স্বাধীনতা।

 

পঞ্চাশ বছর কেটে গেল,

হয়েছে কি দেশে বৈষম্যমুক্ত সমাজ,

শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত রাষ্ট্র,

মানুষ পেয়েছে কি স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ?

বিত্তহীনরা ভিখারি হয়েছে,

মধ্যবিত্ত হারিয়েছে বিত্ত,

উচ্চবিত্তরা শোষণ করে পুলকিত করেছে চিত্ত।

এইসব অসঙ্গতি দেখতে দেখতে ইচ্ছে করে করি চিৎকার,

ইচ্ছে করি কবিতা লিখি, বিদ্রোহী কবিতা লিখি

তাইতো এলোমেলো ছন্দময় কিংবা ছন্দহীন কিছু লেখা লিখি

হয়তো কবিতা হয়, নয়তো নয় কিন্তু তবুও আমি কবি।

সমাপ্ত

Facebook Twitter Email

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। কবিতার পাশাপাশি সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে শুরু হলো ছোটগল্প, উপন্যাস লেখা। একে একে প্রকাশিত হতে থাকলো কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস। প্রকাশিত হলো অমর একুশে বইমেলা-২০২০ পর্যন্ত ০১টি কাব্যগ্রন্থ, ১৪ টি উপন্যাস, ০৪ টি কিশোর উপন্যাস, ০১ টি গল্পগ্রন্থ এবং ০১ টি ধারাবাহিক উপন্যাসের ০৩ খণ্ড। গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পাশাপাশি লেখা ছড়িয়ে পড়লো অনলাইনেও। লেখার শ্লোগানের মতো প্রতিটি উপন্যাসই যেন সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি।

Posted in কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*