মর্জিনারা জেগে উঠেছে

সেই সকালবেলা মর্জিনা বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে এখন বিকেল তিনটা বাজে তবুও বাসায় ফিরল না। ঢাকা শহরে এই বয়সের একটা মেয়ে বাসা থেকে চলে গেল এখনও ফিরল না এটা তো একটা দুশ্চিন্তারই কথা। আগে মর্জিনা সাধারণত বাসা থেকে বের হতো না কিন্তু কয়েক মাস থেকে মাঝে মাঝে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ফিরে আসে অনেক দেরিতে কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে বাইরে কাজ আছে। কয়েকদিন আগে অবশ্য মর্জিনা বলল, আপা মে মাসের এক তারিখে আমার একদিনের ছুটি লাগবে।

রুমানা কিছুটা অবাক হলো, তোর ছুটি লাগবে, কেনো? কোথাও যাবি নাকি?

আমার একটা পার্সোনাল কাজ আছে আপা।

আমাকে বলা যাবে না?

পার্সোনাল তো পার্সোনালই আপা, কাউকে বলা যাবে না।

আচ্ছা ঠিক আছে।

ত্রিশ এপ্রিল রাতে মর্জিনা আবার সেদিনের প্রসঙ্গ তুললো, আপা কাল কিন্তু আমি ছুটি কাটাব।

রুমানার মনে পড়ল কয়েকদিন আগে মর্জিনা ছুটি চেয়েছিল। কালকেই তো এক তারিখ। কিন্তু মর্জিনার কী এমন কাজ। মর্জিনা কোনো ভুল করছে না তো। এই বয়সের মেয়ের কারো প্রেমে পড়া খুব স্বাভাবিক কিন্তু যদি কোনো বিপদে পড়ে, যদি ভুল পথে পা বাড়ায়, যদি ভুল মানুষকে ভালোবাসে।

না, রুমানা আর ভাবতে পারছে না। রুমানা গ্রামের মেয়ে ঢাকা শহরে তার এমন কেউ নেই যে তার বাসায় যাবে। অবশ্য কিছুদিন থেকে মর্জিনা কিছু উল্টোপাল্টা কথা বলছে। মর্জিনা ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে, তারপর টাকা-পয়সার অভাবে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। মর্জিনার মা রুমানাদের গ্রামের বাড়িতে কাজ করত, বিয়ের পর রুমানা তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে, তা আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। আগে খুব ভালো ছিল, কোনো কাজ করতে দিলে খুব তাড়াতাড়ি করে দিত, আর আজকাল সবসময় কোনো না কোনো অজুহাত দেখায়। কয়েকমাস একটু একটু করে টাকা জমিয়ে মর্জিনা একটা স্মার্ট ফোন কিনেছে। মর্জিনার ফেসবুক আইডি আছে, সময় সুযোগ পেলে আবার কখনো কাজের ফাঁকে সে ফেসবুকে ডুবে যায়। তখন কিছু বললে মর্জিনা বলে, আমি এখন একটু ফেসবুকে আছি আপা।

রুমানা অবাক হয়ে যায়। আগে মর্জিনার নেশা ছিল টিভি দেখা, ফেসবুকে আইডি খোলার পর থেকে টিভি দেখার নেশাটা কমেছে, বেড়েছে ফেসবুকের নেশা। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা কাজের মেয়ের ওপর গৃহিনীর অত্যাচারের একটা ছবি দেখে মর্জিনা ছবিটা নিয়ে এসে রুমানাকে দেখালো, আপা, আপা দেখেছেন?

রুমানা তখন রান্না করছিল আর মর্জিনা তরকারি কাটতে কাটতে ছবিটা বের করে রুমানার সামনে ধরলো।

রুমানা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, এখন কাজের সময়, কাজ কর তো, পরে দেখব।

রুমানার কথায় মর্জিনা খুব মন খারাপ করল, আপনাকে সখ করে কিছু একটা দেখাতে চাইলে আপনি তা দেখতে চান না। আমারও এখন একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। আমার ফ্রেন্ড এখন তিন হাজারের বেশি। আপনার বাড়িতে চাকরি করতে পারি কিন্তু ফেসবুকে আমার একটা স্ট্যাটাস আছে আপা।

মর্জিনার কথায় রুমানা হেসে ফেলল, তা তো ঠিক বলেছিস। তিন হাজার ফ্রেন্ড তো কম কথা না। দেখি কী হয়েছে? বলে রুমানা মর্জিনার মোবাইল ফোনটা হাতে নিল।

কাজের মেয়ের ছবিটা দেখেন কীভাবে মেয়েটাকে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছে।

রুমানা দেখলো একটা কাজের মেয়েকে বাড়ির গৃহিণী খুব নির্দয়ভাবে নির্যাতন করেছে, মেয়েটির শরীরে গরম খুন্তির দাগগুলো দগদগ করছে।

মর্জিনা আবেগপ্রবণ হয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা অন্যায় না? আপনি বলেন, এটা অন্যায় কী না?

হ্যাঁ, খুব অন্যায় করেছে। কোনো ভুল করেছিল হয়তো।

তাই বলে এতবড় শাস্তি! কাজের মেয়ে আর কী ভুল করবে, হয়ত একটা গ্লাস আর না একটা প্লেট ভেঙ্গে ফেলেছে। খুব খারাপ হলে পকেট থেকে কিছু টাকা চুরি করেছে, আরো বড় অপরাধ করলে তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিবে, তাই বলে এতবড় শাস্তি।

কোনো দোষ করলে একটু আধটু শাসন করলেই পারতো।

মর্জিনা রুমানার কথার প্রতিবাদ করল, শাসন কেনো করবে আপা? আপনিও তো চাকরি করেন, দুলাভাইও তো চাকরি করে। চাকরিতে কোনো ভুল হলে কি শাসন করে? মাইর দেয়?

কোথায় সরকারি চাকরি আর কোথায় বাসা-বাড়ির কাজ। দুটো কি এক হলো?

মর্জিনা আবারো রুমানার কথা প্রতিবাদ করল, কেনো হলো না আপা, আপনারা করেন সরকারের চাকরি আর আমরা যারা বাসা-বাড়িতে চাকরি করি এটা হলো প্রাইভেট চাকরি। আপনারটা চাকরি আর আমারটা কাজ এটা ভাবা খুব অন্যায় আপা, আপনারা হলেন সরকারের চাকর আর আমরা আপনাদের। চাকর দুজনে, দুজনের কাজই তো চাকরিই।

মর্জিনার কথায় রুমানা অপমান বোধ করল। সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, আচ্ছা তুই এখন কাজ কর। তাড়াতাড়ি রান্না করতে হবে, তোর দুলাভাই এখনই এসে পড়বে।

আচ্ছা।

মর্জিনা সেই যে সকালবেলা বেরিয়েছে এখনো ফেরার নাম নেই। রুমানা মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে মর্জিনার মোবাইল ফোনে করল। মর্জিনা ফোন রিসিভ করেছে কিন্তু তার কথা ভালো শোনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোনো মিছিলের শব্দ, মাঝে মাঝে শ্লোগান। রুমানা আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। রুমানা আবার ফোন করল, হ্যালো।

হ্যালো আপা।

তুই কোথায় আছিস? কোনো সমস্যা নেই তো?

না আপা কোনো সমস্যা নেই। আমি বেলা ডুবার আগেই চলে আসবো। টেনশন করবেন না।

রুমানার মর্জিনার ওপর প্রচণ্ড রাগ হলো, সে বিড়বিড় করে বলতে শুরু করল, কী এতো কাজ যে সারাটা দিন কেটে গেল। আজ আসুক, বলে রুমানা ফোন রেখে দিল।

আজ সারাদিন বাসার সব কাজ রুমানা নিজেই করেছে। পুরো একটা সংসারের কাজ এক হাতে করা অনেক কঠিন। আজ মর্জিনার মর্ম বুঝল রুমানা, মনে মনে মর্জিনার ওপর তার রাগও হলো। আজ মর্জিনা এলে তাকে জিজ্ঞেস করবে কী এতো কাজ যে সারাদিন সে বাইরে কাটাল, ইদানীং তাকে জিজ্ঞেস করলেই বলে তার পার্সোনাল কাজ। রুমানা বার বার ঘড়ি দেখছে আর রাগ গজগজ করছে।

অফিস বন্ধ কাজেই আজ শাকিল অফিস যায়নি। গৃহকর্তা অফিস না গেলে গৃহিণীদের কাজ বেড়ে যায় সারাদিন বলে এটা দাও, ওটা দাও। আবার যে গৃহকর্তা কাজে খুব ব্যস্ত থাকে, স্ত্রীকে সময় দিতে পারে না সেসব গৃহিণীর অভিযোগেরও শেষ নেই। স্ত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। কথায় আছে ঘোড়ার সামনে আর বড় সাহেবের পিছনে যেতে নেই কিন্তু গৃহিণীদের বেলায় তাহলে কী করতে হয়। সামনে পিছনে কোনোটাই যেতে নেই, তাদের ইচ্ছার ওপরই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিতে হয়।

শাকিল রুমানার আগে পিছে কিছু করে না। যেদিন বাসায় থাকে সেদিন আগ বাড়িয়ে কিছু চায় না কিন্তু রুমানা নিজেই সময় হলে চা দেয় শাকিল তখনই খায়। আজও রুমানার মনের অবস্থা দেখে সে কিছু চায়নি রুমানা নিজেই চা এনে শাকিলের সামনে দিয়ে বলল, মেয়েটার আক্কেল দেখেছ, সেই সকালবেলা গেছে এখনো আসার নাম নেই।

শাকিল বলল, কী করবে এখন, সারাবছর তো কোথাও যায় না, বছরে একটা দিন ছুটি কাটিয়েছে। যাক না, সমস্যা কী।

তুমি তো বলেই খালাস, সারাদিন তো তুমি কোনো কাজ কর না, তাই তুমি কিচ্ছু বুঝবে না।

সেজন্য তো আমি তোমার কাছে কিছু চাই না। এই যে তুমি চা দিয়েছ, আমি চেয়েছি?

এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। রুমানা প্রচণ্ড রাগে বল, এই যে মহারাণী এলো, বলতে বলতে দরজা খুলে দিতে গেল। দরজা খুলে দিয়েই বকাবকি করতে শুরু করল, কোথায় ছিলি সারাদিন?

আপা আমি তো সারাদিন ছুটি নিয়ে গেছিলাম। আমার পার্সোনাল কাজ ছিল।

রুমানার রাগ আরো বেড়ে গেলো, এই তুই করিস ঝিয়ের কাজ, তোর আবার বাইরে কীসের কাজ রে?

এভাবে বলবেন না আপা। ঝিয়ের কাজ করি দেখে কি আমার পার্সোনাল লাইফ বলে কোনোকিছু নেই, বলতে বলতে মর্জিনা ডাইনিং টেবিলের সামনের একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।

মর্জিনার চেয়ারে বসা দেখে রুমানা মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠল, আজ কত বছর থেকে মর্জিনা কাজ করে কখনো চেয়ারে বসে না, খাওয়ার সময় পর্যন্ত চেয়ারে বসে না, রান্নাঘরে একটা প্লাস্টিকের টুল আছে, সেই টুলে বসে খায়। আর আজ বাইরে থেকে ফিরে সোজা চেয়ারে বসল। রুমানা অবাক হলো, মর্জিনা তোর তো অনেক উন্নতি হয়েছে?

কী উন্নতি আপা?

তুই তো আগে চেয়ারে বসতিস না, আজ বাইরে থেকে এসে চেয়ারে বসলি।

কেনো আপা কোথাও কি লেখা আছে আমি চেয়ারে বসতে পারব না।

রুমানা জোরে চিৎকার করে শাকিলকে ডাকলো, এই, এই তুমি একবার এসো তো ডাইনিং এ, মর্জিনার কথা শোনো।

শাকিল ডাইনিং এ এসে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

মর্জিনা তখনও চেয়ারে বসে আছে, শাকিল ডাইনিং এ এলে সে দাঁড়িয়ে সালাম দিল, দুলাভাই আসসালামুয়ালাইকুম তারপর আবার চেয়ারে বসল।

রুমানা চিৎকার করে বলল, দেখেছ, মেয়েটার আক্কেল দেখেছ, এতদিন থেকে কাজ করে কোনোদিন চেয়ারে বসে না আর আজ বাইরে থেকে এসে চেয়ারে বসল, এই, এই তুই কোথায় গেছিলি রে, কারা তোকে এসব সাহস দিচ্ছে?

মর্জিনা খুব স্বাভাবিক স্বরে বলল, দুলাভাই বসুন, আপা বসুন। আমার আপনাদের সঙ্গে কিছু কথা আছে।

শাকিল চেয়ার টেনে বসল, রুমানা রাগে গজগজ করছে সে বসল না। সে বলল, বল?

মর্জিনা বলতে শুরু করল, আজ মে দিবস, তাই না আপা?

হ্যাঁ।

এটা তো আমাদেরই দিন, শ্রমিক, কুলি, মজুর, কাজের বুয়াসহ সব খেটে খাওয়া মানুষদের অধিকার আদায়ের দিন।

হ্যাঁ তাতে কি খেটে খাওয়া মানুষদের দিন তাই বলে কি মালিকদের সঙ্গে বেয়াদবি করার দিন নাকি?

রেগে যাচ্ছেন কেনো আপা? রেগে যাচ্ছেন কেনো? আমি যা বলছি শুনুন।

রুমানা রেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল, আচ্ছা বল?

আজ সারাদিন আমাদের র্যাকলি ছিল, মিটিং ছিল। আমি সেখানে গেছিলাম।

তারপর?

মিটিংয়ে আমাদের নেতারা বলে দিয়েছে, আমেরিকায় আট ঘণ্টা পরিশ্রমের দাবিতে অনেক শ্রমজীবী মানুষ জীবন দিয়েছে, তাই আমাদের দেশেও আট ঘণ্টা পরিশ্রম করার জন্য আমরাও আন্দোলন করছি। চাকরি কারো চব্বিশ ঘণ্টার হতে পারে না আপা। এই যে আপনাদের বেলায় দেখুন, আপনারা অফিস যান চাকরি করে ফিরে আসেন, তারপর আপনি ফ্রি, স্বামী সংসার নিয়ে আপনাদের কত সুখ। আর আমরা সেই ভোরবেলা উঠে কাজ শুরু করি, কাজ করি রাত বারেটা পর্যন্ত।

তো?

আমি এবং আমরা যারা বাসা-বাড়িতে চাকরি করি তারা সবাই আর আট ঘণ্টার বেশি কাজ করব না। এখন আপনি আমাকে বলবেন এই আট ঘণ্টা সময় আমি কটা থেকে কটা কাজ করব।

মর্জিনার কথা শুনে রুমানার মনে হচ্ছে তার গালে একটা ঠাস করে চড় মারে। সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, এভাবে কি কেউ কাজ করাবে?

শুধু এটাই না আপা, আমাদের আরো অনেকগুলো দাবি আছে, বলে মর্জিনা তার ব্যাগ থেকে দুটা লিফলেট বের করে একটা রুমানার হাতে আরেকটা শাকিলের হাতে দিল।

রুমানা রাগে ফোঁস ফোঁস করে বলল, রাখ তোর দাবি।

শাকিল মর্জিনার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়তে পড়তে মুচকি হাসি হাসল।

রুমানা জিজ্ঞেস করল, কী লিখেছে, হাসছ কেনো?

পড়ছি শোন, বলে শাকিল আবার জোরে পড়তে শুরু করল, প্রিয় বন্ধু, আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের ১ লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে শ্রমিক মজুররা বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আজ প্রায় দেড়শো বছর হলেও আমাদের দেশে এখনো শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ করে আমরা যারা বাসা-বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার চাকরি করে তাদের ওপর গৃহকর্তা কিংবা গৃহকত্রীদের চলে অমানুষিক নির্যাতন। আমাদের ডিউটি এখনও চব্বিশ ঘণ্টা, কোনো নির্ধারিত বেতন নেই, কোনো ছুটি-ছাটা নেই। খুব ছোটখাটো কারণে আমাদের ওপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাই আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য সাত দফা যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করছি

এক. আমাদের ডিউটি আট ঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে।

দুই. আমাদের একটা নির্ধারিত বেতন থাকবে যাতে আমরাও মানুষ হিসেবে সামাজিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারি এবং প্রতি বৎসর নির্ধারিত হারে বেতন বৃদ্ধি করতে হবে।

তিন. আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে এবং সেই ছুটিতে ডিউটি করলে সেজন্য ওভার টাইম দিতে হবে।

চার. আমাদের সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরির মতো নৈমিত্তিক এবং অর্জিত ছুটি থাকবে। আলোচনা সাপেক্ষে ছুটিতে কাজ করাতে চাইলে অতিরিক্ত মজুরি দিতে হবে।

পাঁচ. আমাদের ওপর কোনো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না। কেউ এরকম আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে দেশে বিদ্যমান ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।

ছয়. আমাদের ভোরণ-পোষণ সামাজিকভাবে, সম্মানজনকভাবে হতে হবে।

সাত. আমাদের যখন-তখন চাকরি থেকে বিদায় করা যাবে না। কোনো গৃহপরিচারিকাকে চাকরি থেকে বিদায় করতে চাইলে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তিন মাস আগে তাকে নোটিশ করতে হবে অথবা তিন মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করতে হবে।

উল্লিখিত দাবিগুলির ব্যাপারে একমত হলে সেই বাড়িতে কোনো গৃহপরিচারিকা কাজ করবে অন্যথায় সে বাড়িতে কোনো গৃহপরিচারিকা কাজ করবে না এবং সমিতিকে অবহিত না করে কোনো গৃহপরিচারিকা কাজ করতে চাইলে সমিতির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং তাকেও কোথাও কাজ করতে দেয়া হবে না।

ধন্যবাদান্তে

বাংলাদেশ গৃহপরিচারিকা কল্যাণ সমিতি।

শাকিলের লিফলেট পড়া শুনে রুমানা হতাশ হয়ে গেল, সে বলল, এভাবে কি চলে নাকি?

সেটা আপা আপনাদের ব্যাপার, আমাদের সমিতির হেল্পলাইন আছে, ফেসবুক গ্রুপ আছে কেউ যদি সেখানে কমপ্লেইন করে তবে সমিতি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিবে।

শাকিল খুব ঠাণ্ডা গলায় বলল, মর্জিনা, তুই সারাদিন মিটিং-সিটিংয়ে ছিলি এখন রেস্ট নে, আমি দেখছি বিষয়টা কী করা যায়, বলে শাকিল রুমানাকে ভিতরে টেনে নিয়ে গেল।

রুমানা গজগজ করে বলল, বললেই হলো। এভাবে কেউ কাজের মেয়ে রাখবে? দেশে কী সব অরাজকতা শুরু হলো, কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না।

শাকিল রুমানাকে বোঝানোর চেষ্টা করল, রুমানা তুমি কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছ?

কী?

মর্জিনা আর আগের মতো আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে না, খাঁটি বাংলা ভাষায় কথা বলে।

হ্যাঁ তাইতো।

সারাদিন মর্জিনা বসে বসে ফেসবুকে গ্রুপে আড্ডা দেয়, গ্রুপ থেকে তাদের সচেতন করে গড়ে তোলা হয়েছে। মর্জিনা সুশিক্ষিত না কিন্তু সে এখন স্বশিক্ষিত। এটাই তো আসল শিক্ষা, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। তাই বলে…

শাকিল রুমানার কথা শেষ হওয়ার আগে আবার বলতে শুরু করল, এখন ওদের এসোসিয়েশন হয়েছে। ওদের চোখ-কান খুলে গেছে। ওরা জেগে উঠেছে। তুমি মাথা ঠাণ্ডা কর, দেখা যাক এখন থেকে মর্জিনাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে কাজ করে নিতে হবে। বিচ্ছিন্ন মানুষ যখন একত্রিত হয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তোলে তখন আর তাদের দাবিয়ে রাখা যায় না। আজকের ওদের এতত্রিত হওয়ার জন্য আমরাই দায়ী, ওদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকলে তো মানুষ লড়াই করবেই।

তুমি কি বলছ, এভাবে মর্জিনারা জয়ী হবে?

অবশ্যই হবে কারণ এবার মর্জিনারা জেগে উঠেছে।

সমাপ্ত।

Facebook Twitter Email

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। কবিতার পাশাপাশি সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে শুরু হলো ছোটগল্প, উপন্যাস লেখা। একে একে প্রকাশিত হতে থাকলো কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস। প্রকাশিত হলো অমর একুশে বইমেলা-২০২০ পর্যন্ত ০১টি কাব্যগ্রন্থ, ১৪ টি উপন্যাস, ০৪ টি কিশোর উপন্যাস, ০১ টি গল্পগ্রন্থ এবং ০১ টি ধারাবাহিক উপন্যাসের ০৩ খণ্ড। গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পাশাপাশি লেখা ছড়িয়ে পড়লো অনলাইনেও। লেখার শ্লোগানের মতো প্রতিটি উপন্যাসই যেন সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি।

Posted in ছোটগল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*