শেষ বিকেলের আলতাদিঘি

সেদিন বিকেলে দু’জনে রওয়ানা হলো আলতাদিঘির উদ্দেশ্যে। জয় দ্রুত বেগে মোটর সাইকেল চালাচ্ছে আর ইরা পেছনে বসে বার বার বলছে, আস্তে চালাও, আস্তে। তুমি তো এত জোরে মোটর সাইকেল চালাও না। আজ আবার এত জোরে চালাচ্ছো কেনো?

রওয়ানা দিতে দেরি হয়ে গেছে ইরা। তাড়াতাড়ি যেতে না পারলে ভালোভাবে দেখাই হবে না।

তাই বলে এত জোরে।

ইরা জয়ের কোমর জড়িয়ে ধরেছিল জয় মোটর সাইকেল চালাতে চালাতে ওর বাম হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, এমন সুন্দরী তরুণী পিছনে বসে থাকলে মোটর সাইকেল কি আস্তে চলতে পারে? কেমন করে যেন গতি বেড়েই যাচ্ছে। কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।

তাহলে স্বীকার করছ সুন্দরী তরুণীই থাকলে গতি এমনি বেড়ে যায়।

অবশ্যই।

আর লেখার?

জয় ইরার কথা বুঝতে না পেরে বলল, বুঝিনি।

ইরা এবার একটু জোরে বলল, তোমার লেখার সময়ও কি কোন তরুণী এমনিভাবে তোমার হৃদয়ে বাস করে নাকি সেজন্য লেখায় গতি থাকে, ছন্দ থাকে, প্রাণ থাকে?

জয় ইরার কথা না বুঝেই বলল, হুম।

তাই? বলে ইরা জয়ের কোমর থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিল। তারপর জয়ের কানের কাছে মুখ এনে রাগান্বিত স্বরে উচ্চ কণ্ঠে বলল, তাহলে আগের বইগুলো লিখেছেন কোন তরুণীর প্রেরণায় মি. রাইটার।

এই হলো, তোমাকে আমি বলি কি আর তুমি বোঝ কি। তাই বলে একজন লেখক কি যতগুলো বই লিখবে ততগুলো নারীর সঙ্গে রিলেশনে জড়াবে। আমি তোমার সাথে ইয়ার্কি করছিলাম। আর তুমি সেটাকে নিয়ে…

ইরা জয়ের কথার মাঝে বাধা দিয়ে বলল, আমিও তো তোমার সাথে ইয়ার্কি করছি মি. রাইটার। তোমার না হয় অসংখ্য ভক্ত-পাঠক আছে যাদের সঙ্গে তুমি ইয়ার্কি করতে পার, টিজ করতে পার একটু-আধটু ভালোবাসা ভালোবাসা খেলাও খেলতে পার।

জয় ইরার কথায় মৃদু হেসে বলল, ব্রেক, ব্রেক, ব্রেক।

ইরা চমকে উঠল, কী সব ব্রেক, ব্রেক, ব্রেক বলছ, ব্রেক তো তুমি করবে আমি ড্রাইভার নাকি?

আরে গাধা আমি তো মোটর সাইকেল ব্রেক করার কথা বলিনি, মোটর সাইকেল ব্রেক করতে হলে তো আমিই করতাম। আমি তোমাকে তোমার কথা ব্রেক করতে বলেছি।

কেন? তুমি কি ভক্ত-পাঠকদের সাথে ভালোবাসা ভালোবাসা খেল না?

জয় জোরাল গলায় বলল, না।

তুমি বললে আর আমি বিশ্বাস করলাম।

ততক্ষণে মোটর সাইকেল জয়পুরহাট ধামইরহাট রোড ছেড়ে আলতাদিঘি রোডে ঢুকে পড়েছে। অনেকদূর এগিয়েছেও একটা রাস্তা এসে দু’দিকে ভাগ হয়ে গেছে। কোথাও কোন সাইনবোর্ড নেই, জিজ্ঞেস করার মত আশেপাশে কোন লোকজনও নেই।

জয় মোটর সাইকেল ব্রেক করে দাঁড়ালো। ইরা জয়ের কাঁধে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, দাঁড়ালে কেনো?

জয় গম্ভীর স্বরে বলল, ইরা ভক্তি আর ভালোবাসা এক না। যারা আমার ভক্ত তারা আমাকে ভক্তি করে হৃদয় দিয়ে তাদের সাথে ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা করলে ভক্তি যে উধাও হয়ে যাবে। ভক্ত’র কাছ থেকে ভালোবাসা আশা করতে হয় না।

আর ভালোবাসা?

ভালোবাসার মানুষ অন্য, যাদের সাথে ভালোবাসা ভালোবাসা খেলতে হয় না। হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হয়।

বাহ। খুব ভালো বলেছ তো। মি. রাইটার, ও সরি ড্রাইভার এতক্ষণ যে জোরে চালালে তাড়াতাড়ি পৌঁছার জন্য আবার এখন দাঁড়িয়ে রইলে যে।

বুঝতে পারিনি? চিনি না তো কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে।

একজন পথচারী এলো। জয় জিজ্ঞেস করল, ভাই আলতাদিঘি কোন দিকে?

পথচারীর দেখিয়ে দেয়া রাস্তা দিয়ে জয় মোটর সাইকেল চালাতে শুরু করল। ইরা বলল, এই তুমি না একসময় ধামইরহাট চাকরি করতে। তখন কোন মেয়ের সঙ্গে যেন তোমার প্রেম ছিল। ওকে নিয়ে নাকি তুমি আলতাদিঘি গেছিলে। আর এখন আবার নাটক করছ, মনে হয় কোনদিন যাওনি।

অনেকদিন আগের কথা সেজন্য পথ ভুলে গেছি।

আর তুমি যে বললে কোন মেয়ের সাথে?

না, কোন মেয়ের সাথে না। ধামইরহাটে আমার কোন মেয়ের সঙ্গে প্রেম তো দূরের কথা বন্ধুত্বও ছিল না, সখ্যতাও ছিল না।

ইরা একটা মুচকি হাসি হেসে বলল, রেগে গেলে মনে হয়?

না, খুশি হয়েছি। তুমি সবসময় এমন সন্দেহ করলে আমি খুব খুশি হই।

খুশি হও?

হ্যাঁ খুশিই হই। মানে আমি খুব সুন্দর, স্মার্ট আর দুনিয়ার সব মেয়ে আমাকে দেখে তাদের সবকিছু ছেড়ে আমার কাছে চলে আসছে শুনে গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়। জয় অনেকটা রাগান্বিত স্বরে বলল।

সুন্দরই তো, স্মার্টই তো। আমার জয় স্মার্ট হবে না। আমার কাছে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর। সেজন্যই তো আমার ভয় হয় কখন কে যে তোমাকে নিয়ে যায় বলতে বলতে ইরার কণ্ঠস্বর আবেগে জড়িয়ে গেল।

কথা বলতে বলতে আর মোটর সাইকেল চালাতে চালাতে দু’জনে বনের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। শালবনের ভিতর দিয়ে সরু কার্পেটিং বিছানো রাস্তা। জয়ের মনে হচ্ছিল সে বুঝি সুন্দরবনের কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।

ইরা জয়ের কাঁধে হাত দিয়ে ওর পিঠের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে আছে। জয় মোটর সাইকেল চালাচ্ছে ধীর গতিতে। একটা নির্দেশনা সাইন বোর্ড, আলতাদিঘি বাম দিকে।

জয় মোটর সাইকেল বাম দিকে ঘুরিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে আলতাদিঘি পৌঁছাল। জয় মোটর সাইকেল দাঁড় করতেই ইরা মোটর সাইকেল থেকে নেমে এগিয়ে গেল।

পুকুরের কাছে গিয়ে আবেগ আল্পুত হয়ে বলল, ওয়াও। কী সুন্দর!

তারপর ইরা পুকুরের পাড় থেকে একটু দূরে এক খণ্ড কংক্রিট দেখে এক লাফে সেই কংক্রিট খণ্ডের ওপর দাঁড়ালো। ইরা এখন যেন একটা দ্বীপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। জয়কে বলল, আমার কয়েকটা ছবি তোল তো।

জয় ইরার ট্যাব দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললো।

ইরা বলল, ভালোভাবে তুলছ তো, পুকুরের অনেকটা অংশ, পিছনের জঙ্গলসহ যেন আসে।

জয় একটা মুচকি হাসি হেসে বলল, জো হুকুম রাণী।

ইরাও হেসে ফেলল। জয় ইরার আরো কয়েকটা ছবি তুললো।

তারপর ইরা যেমন লাফিয়ে গিয়েছিল তেমনি লাফিয়ে আবার পাড়ে চলে এলো। এবার জয় সেই কংক্রিট খণ্ডের ওপর উঠল ইরা জয়ের কয়েকটা ছবি তুললো। তারপর দু’জনে হাত ধরাধরি করে পাড় দিয়ে হাঁটতে শুরু করল।

অদূরে একটা ফুচকা-চটপটির দোকান। সেই দোকানের সামনে একটা কংক্রিটের বড় ছাতা। ছাতার নিচে বৃত্তাকার কংক্রিটের বেঞ্চ।

ওরা দু’জনে কংক্রিটের বেঞ্চে বসল।

ফুচকার দোকানের নাম আলতা। প্রথমে জয়ের মনে হয়েছিল হয়ত দিঘির নাম অনুসারে নাম রেখেছে কিন্তু কিছুক্ষণ পর দোকানদার আলতা বলে ডাক দিতেই পাঁচ ছয় বছর বয়সের একটা মেয়ে দৌড়ে এলো। সুন্দর, ফুটফুটে একটা মেয়ে।

ইরা হাত তুলে ডাক দিল, আলতা।

মেয়েটি ইরার কাছে এলো, ইরা মেয়েটিকে কোলে তুলে নিল, মেয়েটির থুঁতনি উঁচু করে ধরে বলল, তোমার নাম আলতা?

মেয়েটি মাথা উঁচু-নিচু করে বলল, হুম।

ইরা জয়ের কাঁধের ওপর মাথা রেখে বলল, ইসস আমাদের যদি এমন একটা মেয়ে হত।

জয় ইরার কানে ফিসফিস করে বলল, হবে ইরা। সময়টা দিবে তো।

ইরা হাসল, তুমি আমাকে এরকম একটা মেয়ে দিও, আমি আর তোমার কাছে কিচ্ছু চাইব না, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি কিচ্ছু চাই না, শুধু তোমাকে আর আলতার মত একটা মেয়ে।

জয় মৃদু হাসল।

ইরা মৃদু হেসে জোরে ডেকে বলল, এই যে আলতার বাপ আমাদের দু’টা চটপটি দেন।

জি আপা, দিচ্ছি।

ইরা জয়ের সাথে আরো ঘণিষ্ঠভাবে হেলান দিয়ে কয়েকটা সেলফি তুললো। তারপর বলল, এই জায়গাটা খুব সুন্দর। দেখতো আমাদের ছবি তোলার জন্য কাউকে পাওয়া যায় কী না?

ইরার কথা শুনে দোকানদার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে ডাক দিল, শরিফুল একবার এদিকে আয় তো বাবা।

শরিফুল এলো, চাচা বলেন।

ও বাবা, আপা আর ভাইজানের কয়েকটা ছবি তুলে দে তো। আমি তো ছবি তুলতে পারি না।

ইরা শরিফুলকে তার ট্যাব দিয়ে কীভাবে ছবি তুলতে হয় দেখিয়ে দিল। তারপর জয়ের পাশে বসল।

শরিফুল কয়েকটা ছবি তুললো। তারপর চটপটি খেয়ে আবার মোটর সাইকেলে উঠল।

দিঘির চার পাশে সরু রাস্তা। পশ্চিম পাশে ঘন বন। দু’জনে দিঘির চারপাশে একবার চক্কর দেয়ার জন্য মোটর সাইকেলে উঠল। ইরা পশ্চিম পাশে গিয়ে আমার পিঠে মৃদু আঘাত করে বলল, একটু দাঁড়াও তো।

কেন?

একটু দাঁড়াওনা প্লিজ!

জয় মোটর সাইকেল দাঁড় করল।

শেষ বিকেলের রক্তিম বিচ্ছুরিত আভা পাতার ফাঁক দিয়ে ইরার মুখের ওপর পড়েছে। ইরাকে অপূর্ব দেখাচ্ছে। জয় অনেকক্ষণ ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। ইরা জয়ের চোখের সামনে হাত নেড়ে বলল, এই কী দেখছ এভাবে?

ইরা তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, অপূর্ব।

হয়েছে, হয়েছে আর চাপা মারতে হবে না।

চাপা না সত্যি বলছি।

ইরা আবার কয়েকটা সেলফি তুললো। তারপর হঠাৎ করে জোরে হাত তালি দিল, ওয়াও, এই দেখতো এটা কী? তুমি চেন?

জয় বলল, হুম। উইপোকার ঢিবি। তুমি আগে দেখনি?

দেখিনি তবে তোমার একটা বইয়ে পড়েছি।

কোন বইয়ে বলত?

ট্রেন টু ভিলেজ। আমি ওখানে একটু দাঁড়াই তুমি আমার কয়েকটা ছবি তুলে দাও।

জয় ইরার কয়েকটা ছবি তুলে দিল।

ইরা বলল, এরকম একটা জায়গায় আমাকে আগে আনবে তো।

আমি কি আনতে চাইনি, তোমাকে তো যেকোন জায়গায় যেতে বললে শুধু না না বলতেই থাকো।

সাধে কী আর বলি, তুমি বল?

জয় ইরার কথা কিছু না বুঝতেই বলল, কী বলব?

কেন আমি কোথাও যেতে চাই না সেটা কি তুমি জানো না।

অনেক দিন থেকে আলতাদিঘি যাওয়ার কথা কিন্তু ইরার পিছুটান আছে। ইরার পিছুটান থাকারো কারণ আছে। আসলে ওদের দাম্পত্য জীবন, সংসার সবকিছু যেন নাগরদোলায় দোল খাচ্ছিল। প্রতিদিন কোনা না কোন সাংবাদিক ফোন করত, ইরার ছেলে সুমন তাকে ফিরে যাওয়ার জন্য ইরার কাছে কান্নাকাটি করত, ইরার আগের পক্ষের আত্মীয়-স্বজন বিভিন্নভাবে তাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিত। প্রতিদিন দু’জনে মনে করত আজকের দিনটাই বুঝি আমাদের শেষ দিন, আজকের রাতটাই বুঝি আমাদের শেষ রাত। আগামীকাল নতুন সকাল আসার সাথে সাথে কেউ এসে কেউ বুঝি দু’জনকে দু’দিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। দাম্পত্য জীবন হৃদয়ে থাকবে শুধু বেদনাময় স্মৃতি হয়ে। আর সেজন্যই ইরা চাচ্ছিল তাদের বিয়ের বিষয়টা যেন শহরে ছড়িয়ে না পড়ে। ইরার পিছুটানের কারণ শুধু এটাই না। এটা তার মনস্তাত্বিক সমস্যা। সে ভোগের সময় ত্যাগে বিশ্বাসী।

জয় ভাবছিল অন্য কথা। সে সময় ও সুযোগ কাজে লাগাতে বিশ্বাসী। তার চিন্তা ছিল সত্যি সত্যি তাদের দাম্পত্য জীবন যদি স্মৃতির যাদু ঘরে চলে যায়, দাম্পত্য জীবনের বেদনাময় স্মৃতিগুলো যদি সারাজীবন হৃদয়ে দাগ কাটে তবে সেই সময়গুলোকে আনন্দময় করে তুলতে।

জয় ইরাকে জিজ্ঞেস করল, আজকের বিকেলটা খুব সুন্দর না ইরা?

অবশ্যই, খুব সুন্দর।

ইরা হাঁটতে হ্‌াঁটতে জয়ের কাছে এলো। তার কাঁধের ওপর একটা হাত রেখে ঘণিষ্ঠভাবে সঙ্গে মিশে গেল। তারপর জয়কে সূর্যের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল, আজকের বিকেলটা কত সুন্দর। আজকের বিকেলটা যদি জীবনের শেষ বিকেল হত। বলতে বলতে ইরার কণ্ঠস্বর ভিজে গেল।

জয় ইরার মুখে হাত দিয়ে বলল, ইরা সবসময় নেগেটিভ কথা বলবে না তো। তুমি সবসময় আনন্দময় মুহূর্তে কোন না কোন নেগেটিভ কথা বলবেই। এই অভ্যাসটা ত্যাগ কর।

ইরা একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বলল, আমি করতেই চাই কিন্তু পারছি কই?

কেন? নতুন করে আবার কী হলো?

কিছু না।

জয়ের মনে হলো ইরা কিছু লুকাচ্ছে, আমার কাছে লুকাচ্ছ কেনো ইরা? বল প্লিজ! কী হয়েছে?

না, কিছু হয়নি। দেখছ না, পৃথিবীতে কেউ আমাদের রিলেশনটাকে মেনে নিতে পারছে না। প্রতিদিন কত নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দুনিয়ার সবাই চায় আমরা বিচ্ছিন্ন হই। তুমি আর কত সামাল দিবে।

জয় ইরার মুখটা সূর্যের দিকে উঁচু করে ধরলো, তুমি দেখ আমরা সবকিছু কাটিয়ে উঠব, আমাদের প্রতিটি বিকেল হবে আজকের বিকেলটার মত সুন্দর, গোধূলির মত লাল টকটকে সূর্য, হালকা শীতল বাতাস, মেঘহীন মুক্ত আকাশ, ঐ দূরে দেখ বলে জয় ইরাকে দুটো পাখির নীড়ে ফেরা দেখিয়ে দিল।

ইরা বলল, কী?

আমি বলল, দেখো দুটো পাখি নীড়ে ফিরল। আমরা এমন সুন্দর বিকেল শেষে গোধূলিতে বাড়িতে ফিরব।

ইরার ট্যাব বেজে উঠল।

ইরা তার ট্যাব বের করে স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নাম দেখে চমকে উঠল। তার মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেল, বুক কেঁপে উঠল।

জয় জিজ্ঞেস করল, রিসিভ কর।

ইরা জয়ের দিকে ট্যাবটা ধরলো, তোমাকে বলেছিলাম না, ফকির নামে এক সাংবাদিক আমাদের রিলেশন নিয়ে অনেক আজেবাজে প্রশ্ন করছে। বলছে সুমন, ওর বাবা চাইলে নাকি যেকোন সময় আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলতে পারে, আমাদের জেল হাজতে পাঠাতে পারে।

জয় কিছুটা রাগান্বিতস্বরে বলল, আগে ফোন রিসিভ কর ইরা।

না। রিসিভ করব না, এই লোকটাকে আমার খুব ভয় করে।

তবু রিসিভ কর।

না।

কথা বলতে বলতে ফোনের রিং শেষ হলো।

ইরার ওপর জয়ের রাগ হলো, তুমি সহজে কার ফোন রিসিভ করতে চাও না।

ইরার দু’চোখ পানিতে ছলছল করে উঠল, রিসিভ করি না। কারণ ফকির সাংবাদিকের কথা আমি কোন জবাব দিতে পারি না তাই।

এবার ফোন করলে আমাকে দিও।

ইরার রাগান্বিত কণ্ঠে বলল, ওকে দিব, কথা বলতে ইচ্ছা করে তুমি বল।

ইরার ট্যাব আবার বেজে উঠল।

জয় রিসিভ করল, হ্যালো আসসালামুয়ালাকুম।

অপর পাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠের ভারী কর্কশ কণ্ঠস্বর, আমি তো ইরাকে চাচ্ছিলাম। আপনি কে বলছেন?

জয়ও তার মত গম্ভীর স্বরে বলল, ইরার ফোন এখন কে রিসিভ করেছে এটা নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে?

আমি তো ইরার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম, প্লিজ ফোনটা একটু তাকে দিবেন?

না। ও আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায় না।

দেখুন, আমার সঙ্গে কথা না বললে ওর, এমনকি আপনারও অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

আমাকে বলুন।

অবশ্যই আপনার সঙ্গেও বলব কিন্তু আগে ওর সঙ্গে কথা বলব। আমার কিছু তথ্য জানার আছে।

জয় আর না করতে পারলাম না।

ইরা প্রথমে না না করছিল কিন্তু ফকিরের অনুরোধে এবং কথাবার্তায় ভদ্রতার সীমা অতিক্রম না করার প্রতিশ্রুতি পেয়ে ইরাকে ফোনটা দিল।

ইরা সালাম দিয়ে কানের কাছে ট্যাবটা ধরে রাখল। ক্রমে ক্রমে তার মুখ কালো হয়ে গেল, সে ট্যাব কানের কাছে ধরে থাকতে থাকতে তার গণ্ডদেশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।

জয় ইরাকে জিজ্ঞেস করল, ইরা খারাপ কিছু বলছে? ইরা?

ইরার হাত থেকে ট্যাবটা পড়ে গেল।

সমাপ্ত

Facebook Twitter Email

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। কবিতার পাশাপাশি সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে শুরু হলো ছোটগল্প, উপন্যাস লেখা। একে একে প্রকাশিত হতে থাকলো কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস। প্রকাশিত হলো অমর একুশে বইমেলা-২০২০ পর্যন্ত ০১টি কাব্যগ্রন্থ, ১৪ টি উপন্যাস, ০৪ টি কিশোর উপন্যাস, ০১ টি গল্পগ্রন্থ এবং ০১ টি ধারাবাহিক উপন্যাসের ০৩ খণ্ড। গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পাশাপাশি লেখা ছড়িয়ে পড়লো অনলাইনেও। লেখার শ্লোগানের মতো প্রতিটি উপন্যাসই যেন সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি।

Posted in ছোটগল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*