বিশেষ দিবসের মা

তালুকদার সাহেব টিভি চ্যানেলের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছেন আর বার বার ঘড়ি দেখছেন। কখনো চেয়ার থেকে উঠে রুমে পায়চারি করছেন। তার চোখে অনেক স্বপ্ন, এবার তাকে ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিতে হবে, পৌরসভার মেয়র হতে হবে। তিনিই হবেন ফুলবাড়ী পৌরসভার পৌরপিতা, কথাটা ভাবতেই তালুকদার সাহেবের বুকটা ভরে গেল। আজকাল রাজনীতি করতে গেলে মিডিয়ায় ঘন ঘন চেহারা দেখাতে হয়। আর যারা তার মতো টিভি চ্যানেল পর্যন্ত আসতে পারে না, তারা ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে মানুষের দোয়া চায় কিন্তু তালুকদার সাহেবের দুটোই প্রয়োজন। তারও ডিজিটাল ব্যানারে শহরের রাস্তার দুপাশে ভরে যাবে, সেব্যবস্থা তিনি যথাসময়ে করবেন। তিনি আরও বেশি করবেন, যেটা সবাই পারবে না। তিনি ডিজিটাল ব্যানার বানাবেন, তাতে লিখবেন, ফুলবাড়ী পৌরসভার উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা, সৎ, নির্ভীক, জনমানুষের প্রকৃত বন্ধু আলহাজ মহসীন আলী তালুকদারকে পৌরপিতা হিসেবে দেখতে চাই। প্রচারেঃ ফুলবাড়ী পৌরসভার জনসাধারণ।

এরকম হাজার হাজার ডিজিটাল ব্যানারে তিনি পুরো পৌরসভার রাস্তার দুপাশে ভরিয়ে দিবেন যেন ফুলবাড়ীর মানুষ মনে করে যে তালুকদার সাহেবের জনপ্রিয়তাই এখন শীর্ষে। একটা কথা আছে, প্রচারেই প্রসার। নের্তৃত্বকে প্রসারিত করতে চাইলে, জগনণের কাছে সুপরিচিত হতে চাইলে ব্যানার, ফেস্টুন, মিডিয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তার জনপ্রিয়তার খবর পৌঁছে যাবে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে, তাতে করে তার দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সহজ হবে। আর ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়া মানেই তো নির্বাচনে জয়ী হওয়া, মানে ফুলবাড়ী পৌরসভার পৌরপিতা। তাই নিজের পরিচয় জানিয়ে দিতেই আজকের এই ইন্টারভিউ, বলা যায় এটাও তিনি করিয়েছেন একরকম তদ্বির করে। এমনিভাবে মা দিবস, বাবা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন ইস্যুতে টিভিতে ইন্টারভিউ দেয়া আর টক’শোগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারলেই তিনি একদিন সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিচিত হবেন। মনোনয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাকে দেখলেই মনে করবেন একজন জনপ্রিয় নেতা, স্নেহের সুরে বলবেন, আরে তুমি!

আগের দিনে দেখা যেত রাজনীতিবিদরা ভোটের জন্য ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেত। ভোটারদের মন জয় করার জন্য তাদের সেবা করত, তাদের ভালো-মন্দের খবর রাখত, ভোটারদের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াত। সে অবস্থার এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভোটে বিজয়ী কিংবা পরাজিত হওয়া ভোটারদের ভোটের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে কে কোন দল থেকে মনোনয়ন পেল। ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন পেলে তো হয়েই গেল, বিজয়ের মুকুট তার মাথায় শোভা পাবে নিশ্চিত। সেবকের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজয়ের মুকুট পরা মানুষটিই হবে জনগণের শাসক।

আর কয়েকদিন পরেই তালুকদারের সবচেয়ে লড়াইয়ে নামতে হবে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই। তালুকদার সাহেব সম্প্রতি কয়েকটা ঘটনা লক্ষ্য করলেন। দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মী না, জনগণের কাছে জনপ্রিয় তো নয়ই, সুপরিচিতও না। অথচ জেলা পর্যায়েল বড় বড় নেতাদের ডিঙিয়ে হঠাৎ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়ে হাজির হলো। কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেয়া হলো, দল যাকে মনোনয়ন দিবে দলের সব নেতাকর্মীদের তাদের হয়েই কাজ করতে হবে এর বিচ্যুতি ঘটলে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে। ইচ্ছায় হোক আর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই হোক সব নেতাকর্মীরা এক হয়ে সেই প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে এনে মাথায় মুকুট পরিয়ে দিল।

তালুকদার সাহেবের অবস্থাটাও ঠিক সেরকমই। মহাজ্ঞানী মাহজন, যে পথে করে গমন। তালুকদার সাহেবও সেইসব প্রার্থীদের পথ অনুসরণ করছেন। আর তাই এখন তার কাজ একটু একটু করে এগিয়ে চলা। পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট আর টিভি ক্যামেরায় নিজেকে প্রদর্শন করা। তাতে করে তিনি সবার কাছে পরিচিত হবেন আর যেকোনো কৌশলে দলীয় মনোনয়ন হাতিয়ে নিবেন আর দলীয় মনোনয়ন হাতিয়ে নিতে পারলেইতালুকদার সাহেবের হাত থেমে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিবে এই দুঃসাহস কার।

ওয়েটিং রুমে একটা মেয়ে এসে একটা সুন্দর হাসি হেসে বলল, জাস্ট টেন মিনিট স্যার।

তালুকদার সাহেব আমতা আমতা করে বললেন, ওকে ঠিক আছে। আমি ওয়েট করছি বলে তিনি আবার সোফায় বসে পড়লেন।

মেয়েটি আর দশ মিনিট বলল, তালুকদার সাহেব মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, মাকে নিয়ে গতানুগতিক কিছু কথা মনের মধ্যে সাজিয়ে নিচ্ছেন। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন এমন সময় তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল।

তালুকদার সাহেব কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলেন, হ্যাঁ, রিতু বল।

রিতু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো, মায়ের অবস্থা ভালো না। মায়ের শ্বাস কষ্টটা বেড়েছে।

উফ্‌, তো আমি কী করব। আমি তো ডাক্তার নই, মঞ্জুকে বল একটা ভালো ডাক্তার দেখাতে, আমি গিয়ে টাকা দিয়ে দিব।

মা’র অসুখ আর তুমি আসবে না ভাইয়া! টাকা দিয়েই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাচ্ছো। আসলে তোর যাওয়াই ঠিক হয়নি। মা নাকি তোকে যেতে নিষেধ করেছিল।

রিতু বোঝার চেষ্টা কর। আমি কি বেড়াতে এসেছি, আমি একটা টিভি চ্যানেলে এসেছি ইন্টারভিউ দিতে, তোরা একটু দেখ, আমি অনুষ্ঠান শেষ করেই চলে আসব।

তুমি অতক্ষণ সময় পাবে না ভাইয়া, মা আর বাঁচবে না। মা বার বার করে তোকে দেখতে চাচ্ছে। বলছে আমার মহসীনকে বল, আমি শেষবারের মতো ওকে একবার দেখতে চাই।

উফ্‌। রিতু জানিস না ফুলবাড়ী থেকে ঢাকা কতদূর! মা বলল আর আমি উড়ে চলে গেলাম। এখন রাখ রিতু এখনই আমার ইন্টারভিউ শুরু হবে।

তোর কাছে মায়ের মৃত্যুর কাছে ইন্টারভিউটাই বড় হলো! ঠিক আছে ভাইয়া আমিও আর তোকে ফোন দিব না, তবে একটা কথা তোকে বলে রাখি যে মানুষ নিজের মায়ের মৃত্যুশয্যার পাশে এসে দাঁড়ায় না সে অন্যের মায়ের কী কাজে আসবে বলে রিতু তালুকদার সাহেবের কথার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মোবাইলের লাইন কেটে দিল।

মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ফাতেমা বিবি। বয়স আশি’র ঊর্ধ্বে, দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। শরীরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গাল-মুখের চামড়াগুলো ফাগুনের খাঁ খাঁ রোদে ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ক্ষেতের জমির মত হয়ে গেছে, কপালের চামড়ায় অসংখ্য ভাঁজ পড়েছে। চোখ দুটো বসে গেছে কোটরে, দাঁত উঠে যাওয়ায় দুই চিবুক যেন গভীরে বসে গেছে। শরীরের হাড়-মাংস এক হয়ে গেছে। পাঁজরের হাড়গুলো যেন চামড়ার সঙ্গে এক হয়ে মিশে গেছে। পেটে খাবার নেই, পেট যেন পিঠের সঙ্গে মিশে গেছে। নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে বুক অনেকটা উঠানামা করছে, আশেপাশে তার আরেক ছেলে মঞ্জুরুল,মঞ্জুরুলের বউ, মেয়ে, নাতি-নাতনি এবং পড়শিরা ঘিরে ধরে রেখেছে। অনেকেই দোয়া দরুদ পড়ছে আর আল্লাহর কাছে ফাতেমা বিবির জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করছে।

ফাতেমা বিবি হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলেন, ম, ম, মহসীন…

রিতু বলল, তুমি কথা বল না মা। ভাইয়ার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, ভাইয়া আসছে। তুমি কোনো চিন্তা কর না মা।

হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক কষ্টে তিনি বলতে শুরু করলেন, ও আসতে আসতে কি আজরাইল আমাকে রাখবে, আমার যে আর সময় নেই বলতে বলতে তার শ্বাস কষ্টটা আরও বেড়ে গেল। তবুও তিনি কথা বলার চেষ্টা করছেন। তিনি আবার হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, আমি কি ওকে না দেখেই চলে যাব।

রিতু হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠল, মা, মা তুমি এভাবে বলছ কেনো? তোমার কিচ্ছু হবে না মা। তুমি ঠিকই সুস্থ হয়ে উঠবে। তুমি চলে গেলে আমরা কীভাবে বাঁচব মা। কে আমাদের মাথার ওপর ছায়া দিবে।

আমার বুঝি সময় শেষ হয়ে গেল মা। সোনা মানিক আমার আসতে আসতে বুঝি আমি চলে যাব। ওকে একবার ফোন দে তো মা। আমি একটু কথা বলি।

রিতুর ইচ্ছা ছিল না যে সে আবার তার ভাইকে ফোন দিবে কিন্তু মৃত্যুপথ যাত্রী মায়ের অনুরোধে সে আবার ফোন করল।

ক্যামেরার সামনে গেলে প্রথম প্রথম তালুকদার সাহেবের মধ্যে একটা জড়তা কাজ করত, গলা শুকিয়ে যেত, মনে হতো সারা দুনিয়ার মানুষ তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। টেবিলের ওপর একটা ফুলের তোড়া, তার জন্য একটা আর উপস্থাপকের জন্য একটা চায়ের কাপ। কথায় কথায় তালুকদার সাহেব জানতে পারলেন উপস্থাপক মেয়েটির নাম ফরিদা জাহান। মেয়েটি খুব সুন্দর, স্মার্ট, আকর্ষণীয় চেহারা অধিকারী। গায়ের রং ফর্সা, মেয়েটি নেভি ব্লু রঙের শাড়ি পরেছে। ক্যামেরা, মাইক চালু হওয়ার আগে জাহান অনুষ্ঠানের বিষয়বস’ এবং কোন দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন জানিয়ে দিল। ক্যামেরাম্যান তার দিকে ক্যামেরা তাক করল, একজন ক্যামেরা সহকারী এসে তালুকদার সাহেবের কাছে এসে তাকে জানিয়ে গেল, স্যার আপনি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন আর যখন দর্শকদের উদ্দেশ্য কথা বলবেন তখন বলে আঙ্গুল দিয়ে একটা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন।

তালুকদার সাহেব মাথা বাঁকিয়ে সায় দিলেন।

এবার জাহান বলতে শুরু করল, সুধী দর্শক, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আজ বিশ্ব মা দিবস। জগতে মায়ের তুলনা নেই। মাকে নিয়ে আসলে আলোচনার কোনো শেষ নেই। একজন মা একজন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সন্তানকে লালনপালন করেন, মৃত্যু শয্যায় শুয়েও সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন। মা এবং সন্তানের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক যে সম্পর্কের মধ্যে কোনো স্বার্থ নেই।

সুধী দর্শক বসুন্ধরা টেলিভিশনে আমাদের আজকের আয়োজন, ’’মা জননী’’এখন আপনাদের সামনে মা সম্পর্কে তার অনুভূতি ব্যক্ত করবেন আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি,সুদূর ফুলবাড়ী থেকে আগত আগামী দিনের পৌরসভার মেয়র, আগামী দিনের পৌরপিতা, তরুণ জননেতা আলহাজ মহসিন আলী তালুকদার। আমি প্রধান অতিথিকে মায়ের প্রতি তার অনুভূতি প্রকাশের জন্য জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

তালুকদার সাহেব বলতে শুরু করলেন, আজকের মা দিবসের অনুষ্ঠান ’’মা জননী’’র সকল দর্শক, সকল জন্মদাত্রী, পরম শ্রদ্ধেয় মায়েরা আসসালামুয়ালাইকুম। আসলে একজন মায়ের গুণকীর্তন করার মতো জ্ঞান আমার নেই। আপনারা সবাই জানেন, আমি একজন রাজনীতিবিদ, আগামী পৌরসভা নির্বাচনের আমি ফুলবাড়ী পৌরসভা থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমি মনে করি পৃথিবীতে মায়ের তুলনা নেই। আজ আমি যে চেয়ারে বসে কথা বলছি সেটাও সম্ভব হয়েছে একজন মা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন বলে, আমার মা যদি আমাকে লালনপালন না করতেন তবে নিশ্চয়ই আমি সেই আতুঁড় ঘরেই মারা যেতাম। একজন মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে একজন সন্তান জন্ম দেন এটা যে কত কষ্টের সেটা শুধু একজন মা-ই জানেন কিন্তু খুব দুঃখ লাগে যখন একজন সন্তান তার মাকে অবহেলা করে,বৃদ্ধ মায়ের দেখাশুনা করে না। বৃদ্ধ মায়ের সেবাযত্ন করে না।

তালুকদার সাহেবের মোবাইল ফোন বেজে উঠল, তিনি মোবাইল ফোন দেখে লাইন কেটে দিলেন।

জাহান এবার দ্বিতীয় প্রশ্নটি করল, আচ্ছা আপনি তো একজন রাজনীতিবিদ। একজন মায়ের প্রতি সন্তান হিসেবে তো বটেই, একজন রাজনীতিবদি হিসেবেও আপনার পৌরসভার মায়েদের জন্য ভবিষ্যতে কী কী করার পরিকল্পনা আছে?

একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি মনে করি আমার এলাকার সকল মা, আমার মা। তাদের প্রতি আমার দায়িত্ব হবে তাদের মুখে হাসি ফুটান। কোনো মা যেন চোখের জল না ফেলেন। দরিদ্র এবং বিধবা মায়েদের যেন মুখে দুমুঠো ভাত জোটে, ভালো কাপড় চোপড় পরতে পারেন, কোনো সন্তান যদি তার মাকে কষ্ট দেয় তবে তাকেও আমি পৌরসভায় ডেকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা করব।

তালুকদার সাহেবের মোবাইল ফোন আবার বেজে উঠল। এবার তিনি মোবাইল ফোন দেখে বন্ধ করে দিলেন।

অনেক ব্যস্ততার মাঝে আমাদের স্টুডিওতে এসে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

তালুকদার সাহেব ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, আপনাকেও ধন্যবাদ, আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য বসুন্ধরা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি আমার অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

স্টুডিও থেকে বেরিয়ে তালুকদার সাহেব মোবাইল চালু করতেই আবার রিতুর ফোন ঢুকলো। তালুকদার সাহেব এক চোট নিলেন, কী রে, আমি তোকে বললাম, আমি একটা টিভি চ্যানেলে আছি, পরে বের হয়ে কল দিব তবুও তোর ধৈর্য ধরলো না। ফোনের ওপর ফোন। তোরা আমাকে উপরে উঠতে দিবি না।

রিতু প্রচণ্ড ক্ষোভের সঙ্গে বলল, এখন ওপরে ওঠ ভাইয়া, ওপরে ওঠ। মা চলে গেছে।

চলে গেছে মানে!

চলে গেছে মানে নেই। আর কোনদিন ফিরে আসবে না। তোকে অনেকবার দেখতে চেয়েছিল, শেষে শুধু একবার ফোনে কথা বলতে চেয়েছিল, সেজন্য আমি তোকে বার বার ফোন দিচ্ছিলাম আর তুই ফোনটা বন্ধ করে দিলি! বলে রিতু হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।

ততক্ষণে তালুকদার সাহেব ওয়েটিং রুমে এসে পৌঁছেছেন। তিনি একটা সোফায় ধপাস করে বসে পড়লেন। তার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল শৈশবের স্মৃতি, মা তাকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিতেন, স্কুল ড্রেস পরিয়ে দিতেন, স্কুলে নিয়ে যেতেন, ক্লাসে পাঠিয়ে দেয়ার সময় আবেগজড়িত কণ্ঠে বলতেন, যা বাবা, ভালো করে লেখাপড়া কর। একদিন অনেক বড় হবি।

মা তুমি চলে গেলে, আমাকে নিয়ে যে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতে, আমিও যে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। মা, মা, এখন আমার কী হবে মা, মা জননী আমার।

সমাপ্ত।

Facebook Twitter Email

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। কবিতার পাশাপাশি সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে শুরু হলো ছোটগল্প, উপন্যাস লেখা। একে একে প্রকাশিত হতে থাকলো কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস। প্রকাশিত হলো অমর একুশে বইমেলা-২০২০ পর্যন্ত ০১টি কাব্যগ্রন্থ, ১৪ টি উপন্যাস, ০৪ টি কিশোর উপন্যাস, ০১ টি গল্পগ্রন্থ এবং ০১ টি ধারাবাহিক উপন্যাসের ০৩ খণ্ড। গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পাশাপাশি লেখা ছড়িয়ে পড়লো অনলাইনেও। লেখার শ্লোগানের মতো প্রতিটি উপন্যাসই যেন সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি।

Posted in ছোটগল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*